ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের চিরস্থায়ী বসতি নয়

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সরকার যেখানে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সেখানে হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে তাদের আবাসনের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা মোটেই উচিত হবে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ জন্য হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে বসবাসের জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণে চলতি বাজেট থেকে জরুরি বরাদ্দ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা চেয়েছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

কিন্তু তাদের সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সূত্র জানায়, ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্প্রতি ৫০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে অর্থবিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠায়। এতে ১৫ কোটি টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। এতে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীও স্বাক্ষর করেন।

এ খাতে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার ব্যাপারে একটি নোট লিখেছেন অর্থমন্ত্রী। তার স্বাক্ষরিত ওই সারসংক্ষেপে তিনি লিখেছেন, ‘এ উদ্যোগটি এখন বাদ দেওয়া যথাযথ হবে। যেখানে আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছি। তখন ভাসানচরে তাদের জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ইঙ্গিতই দেওয়া উচিত নয়।

এ কাজটি এই মৌসুমে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং এ জন্য কোনো বরাদ্দ আপাতত দেওয়া যাবে না। ’ সারসংক্ষেপটি অর্থমন্ত্রীর কাছে গত ৬ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে। এতে তিনি সে দিনই এমন মতামত দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী এর আগেও অবশ্য ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে জোর তৎপরতা চালানোর কথা জানিয়েছেন। সেই কক্সবাজার, হাতিয়াসহ পর্যটন এলাকার পরিবেশ রক্ষায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো জরুরি বলে গণমাধ্যমের কাছে একাধিকবার মতামত দিয়েছেন।

পরে গত ৭ নভেম্বর অর্থবিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীও এতে স্বাক্ষর করেছেন। সারসংক্ষেপে বলা হয়, এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা ও সামরিক সচিব ভাসানচর দ্বীপটি পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়।

পরে গত ২৬ অক্টোবর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং নৌবাহিনীর সঙ্গে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সভাপতিত্ব করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের চিরস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন না করে জরুরিভিত্তিতে যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে সেটাই তাদের বসবাসের জন্য উপযোগী বলে মতামত দিয়েছে অর্থবিভাগ। এ জন্য ভাসানচরে নতুন করে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তবে পরবর্তীতে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে চাহিদার এই অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। এমনকি এ খাতের অব্যয়িত অর্থ ৩০ জনু-২০১৮ এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে সমর্পণ করতে হবে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সাময়িক বসবাসের জন্য ১৩ হাজার একর খাসজমি চিহ্নিত করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। এতে একটি হেলিপ্যাড, কিছু টয়লেট, চারটি শেড ও সীমিত পরিসরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন