মংডুতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের বিরোধী জাতিগত রাখাইনরা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

জাতিগত রাখাইনরা মিয়ানমার সরকারকে জানিয়েছে, তারা অশান্ত রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণ মংডুতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিরোধী।

রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের নাগরিক কমিটির প্রায় ৮০ জন সদস্য ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানী সিত্তুইয়ে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের আয়োজক রাখাইন সোশাল নেটওয়ার্কের সো নাইং বলেন, সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দক্ষিণ মংডুয়ের ছয়টি জায়গায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে, যে সব জায়গায় চল্লিশের দশকের পর থেকে সহিংসতা ঘটে আসছে।

জাতিগত রাখাইন সো নাইং ইউসিএনিউজকে বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা স্থানীয় জাতিগত জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত। কারণ এই দুই জনগোষ্ঠির একসাথে বসবাস সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, এই এলাকার কিছুটা অংশ উপকূলীয় এবং সীমান্ত বরাবর দেয়াল নির্মাণ সম্ভব নয়। সে কারণে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী আসতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

সো নাইং বলেন, “আমরা চাই যাতে সরকার বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা সবার পরিচয় ভালো ভাবে যাচাই করে দেখে কারণ তাদের মধ্যে জঙ্গি রয়েছে। তাই আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য উদ্বেগ বোধ করছি।”

রাখাইন জনগোষ্ঠি ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক ইউনিয়ন মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ির সাথে জানুয়ারিতে বৈঠক করেছেন। কিন্তু তারা বলছেন, পুনর্বাসন পরিকল্পনার ব্যাপারে তারা তাদের প্রশ্নের কোন ইতিবাচক জবাব পাননি।

উত্তর রাখাইনের বুথিদাউং শহরের জাতিগত রাখাইন জাউ উইন বলেন, তারা চান না যে, আবার সঙ্ঘাত শুরু হোক।

তিনি ইউসিএনিউজকে বলেন, “আমরা সরকারের পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করি না কিন্তু ফিরে আসা মানুষদের অবশ্যই রাখাইনের সাবেক বাসিন্দা হতে হবে এবং তাদেরকে মিয়ানমারের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে।”

জাউ উইন বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অধিকার দাবি করেছে এবং রাখাইন দখল করার ব্যাপারে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের জাতিগত জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ তাদের রাখাইনের ভূমি নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে।”

মিয়ানমারের পার্লামেন্ট সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া নির্মাণের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ রাখাইনে বেশ গভীর। মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রোহিঙ্গাদের বাঙ্গালি বলে থাকে। তারা তাদের বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী মনে করে। কিন্তু বাস্তবে প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা বহু দশক ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার শরণার্থীদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়।

২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা বেশ কয়েকটি সীমান্ত পোস্টে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে এবং প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২৩ ফেব্রুয়ারি বলেছে, স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে রাখাইনদের উৎখাতের পর উত্তর রাখাইনের বেশ কিছু গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

 

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন