মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণায় বাধা 

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারাবন্দী এএইচএম হামিদুর আযাদের প্রচারণায় বাধা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও নৌকার প্রতীকের লোকজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তাদের হুমকিতে হামিদ আযাদের লোকজন ঘর থেকে বেরও হতে পারছে না। কিন্তু কোথাও তার প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে হামিদ আযাদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জাকের হোসাইন এই অভিযোগ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি জেনারেল শামসুল আলম বাহাদুরসহ নেতৃবৃন্দ।

তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটক করছে। এসব মামলায় তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী।

প্রচারণা শুরুর পর থেকে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে প্রতিদিন ঐক্যফ্রন্টের হামিদ আযাদের আপেল মার্কার লোকজনকে নানাভাবে বাধা ও হয়রানি করছে নৌকার লোকজন ও পুলিশ। গণসংযোগে বাধা, প্রচারণা মাইক ও গাড়ি ভাংচুর, মারধর, পুলিশ কর্তৃপক কর্মীদের আটক এবং হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

জাকের হোসাইন জানান, ২১ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটায় কুতুবদিয়া বড়ঘোপ বাজারে নৌকা লোকজন রায়হান, রহিম ও মানিক নামে আপেল মার্কার তিনজন কর্মীকে মারধর করে। তাদের কাছে থাকা পোস্টার ও লিফলেট ছিড়ে ফেলে। বিকাল ৫টায় মহেশখালীর শাপলাপুরের মুকবেকী এলাকায় নৌকার লোকজন আপেল প্রতীকের প্রচারণার মাইক ভাংচুর করে। প্রচারে নিয়োজিত সমর্থককে বেদম প্রহার করে।

২২ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইল থেকে মাওলানা কামাল ধুরুং বাজার থেকে মো. ছৈয়দ আলমকে পুলিশ বিনা গ্রেফতারী পরওয়ানা ছাড়াই আটক করে পুলিশ। একই দিন বিকাল সাড়ে তিনটায় ধূরং বাজার এলাকায় যুবলীগ কর্মী শওকত, জুনাইদ, হোছাইন, আবু ওমর ও বাপ্পা রাজের নেতৃতে প্রচারণার মাইক ও গাড়ি ভাংচুর করে পোস্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নেয়। বিকাল পাঁচটায় কৈয়ারবিল আপেল প্রতীকের প্রচারের গাড়ি ও মাইক ভাংচুর করে। দুই কর্মীকে মারধর করে পোস্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নেয়।

একই দিন মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আপেল প্রতিকের সমর্থকদের বাড়িতে তল্লাশী চালায় পুলিশ। ওই দিন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মগডেইল এলাকার কাউমি মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে সংঘটিত ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আপেল প্রতীকের সমর্থকের আসামি করা হয়।

এছাড়া কালারমারছড়া ইউনিয়নর সর্দ্দার ঘোনা (দক্ষিণ) এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোস্তাক আহমদকে নিজ থেকে বিনা গ্রেফতারী পরোয়ানায় গ্রেফতার করে পুলিশ এবং ওইদিন রাতে বিনা কারণে বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, কুতুবজোম, হোয়ানক, মহেশখালী পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিনা কারণে আপেল প্রতীকের সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ হানা দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।

২৩ ডিসেম্বর বিকাল তিনটায় প্রার্থী হামিদুর রহমান আযাদের কুতুবদিয়ার উত্তর ধূরংস্থ বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। সেখানে বেড়াতে আসা তিনজন অতিথিকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। একই দিন রাতে সেনাবাহিনীর নামার আগেই মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার সব এলাকায় আপেল প্রতীকের সব পোস্টার ও ব্যানার ছিড়ে ফেলেছে নৌকার লোকজন।

কুতুবদিয়া থানার ওসি নিজেই আপেল প্রতীকের সমর্থকদের গণসংযোগ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে ভাড়া না দিতে মাইক ও গাড়ির মালিকদের নির্দেশ দেন। সম্ভব্য পোলিং এজেন্টদেরও ওসি এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেন জাকের হোসাইন।

এসময় জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচারণা বাধা এবং কর্মীদের আটকসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি অভিযোগের প্রতিকার পাইনি। এমন অবস্থায় আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমাদের অভিযোগের সুরাহা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন