মানিকছড়িতে কমিটি গঠনকে ঘিরে বিএনপি এখনো দু’শিবিরে বিভক্ত

মানিকছড়ি প্রতিনিধি : প্রায় একযুগ পর মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে! সম্প্রতি মূলদলের সভাপতি ও সম্পাদক তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের না জানিয়ে বিএনপি,যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় এখন প্রকাশ্যে প্রতিবাদে নেমেছে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ  সভাপতি ও সম্পাদকের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা  জানান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি এখনও দু’শিবিরে বিভক্ত!

তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও দলীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০০১ সালে মানিকছড়ি উপজেলা বিএনপি’র ঘোষিত‘কমিটি ২০০৪ সালে এসে আংশিক পরিবর্তন সাপেক্ষে দলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু ওই কমিটিকে  বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের একাংশ মেনে না নেওয়ায় এ যাবৎ দলে চলছিল গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ওর মতানৈক্য! এক পর্যায়ে মূলদলের এ তিক্ততা ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রদল ও যুবদলে।

এর পর গত ২০০৯ ও ২০১৪ সালে অনুষ্টিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এবং সর্বশেষ গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থীদের ভরাডুবিতে তৃণমূলে প্রভাব পড়ে। নেতা-কর্মীরা দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করেন। তাতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তৃণমূলের এসব আকুতি আমলে না নিয়ে বিএনপি’র একাংশকে বাদ দিয়ে সম্প্রতি অনেকটা গোপনে ৪ ইউনিয়নে বিএনপি,যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেন।

ফলে ঘোষিত কমিটির নেতা-কর্মীরা দলবল নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করলে সেখানে তাদেরকে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়া ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। কিন্তু পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো.ইব্রাহিম খলিল স্বাক্ষরিত পত্রে দেখা যায়, উপজেলা থেকে প্রেরিত কমিটির অনেক ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম অর্ন্তভুক্ত করে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। এক পর্যায়ে উপজেলা ছাত্রদলের ১০ যুগ্ন আহবায়ক এর মধ্যে ৭জন গত ২২ সেপ্টেম্বর স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

অন্যদিকে ইউনিয়ন যুবদলের বর্তমান কমিটিকে না জানিয়ে বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নতুন কমিটি ঘোষণা করার প্রতিবাদে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে বাটনতলী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা নতুন কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ন সম্পাদক মো. আলী মিয়া। বক্তব্য রাখেন,  সাবেক ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক নজরুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি মো. আবদুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক আওয়াল, সাংগঠনিক মো. মোসলেম উদ্দীন, ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. সোলেমান, আবুল কাশেম, নজরুল ইসলাম, মো. ইসমাইল ও আবুল কাশেম।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম.এ. করিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক এনাম দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপি শিবির নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে! তৃণমূলের কাউকে না জানিয়ে সম্প্রতি তাঁরা সেক্রেটারীর ঘরে বসে ত্যাগী (সরকার দলের মামলা-হামলায় জর্জরিত)নেতাকর্মীদের কমিটির গঠন করেন। যা যুবদলের কেউ মেনে নেবে না। উক্ত পকেটিয়া কমিটিকে আজ থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করাসহ উপজেলা বিএনপি নেতাদের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজিবুল হক বাহার বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি গঠনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা ভূলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এম.এ. করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, সদ্য গঠিত ইউনিয়ন ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপি’র ঘোষিত কমিটির মধ্যে ছাত্রদল ও যুবদলের পদবঞ্চিত ছেলেদের মধ্যে মান অভিমান দেখা দিযেছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে বিএনপিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অনুমোদনও হয়েছে। এ নিয়ে কারো অভিমান নেই।

বিএনপি’র অপর অংশের (সমীরণ দেওয়ান) সভাপতি এস.এম. রবিউল ফারুক বলেন, যেখানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দলের সাংগঠনিক মান বাড়াতে দেশব্যাপি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে অতীতের ন্যায়  আবারও খাগড়াছড়ি বিএনপি শিবির নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় মেতে উঠেছেন ওয়াদুদ ভুঁইয়া। তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়িতে এ নেতা কখনও বিএনপি’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনা করেনি। যার কারণে মরহুম জিয়াউর রহমানের পদলিত পার্বত্য এ জনপদে আজ বিএনপি’র ত্যাগী নেতাকর্মীরা দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন