মানিকছড়ি জিওবি-ইউনিসেফ পানি সরবরাহে ২৫ লক্ষ টাকার প্রকল্পের নলকূপে ৩ বছরে এক ফোঁটা পানি পায়নি কেউ!

IMG_5327

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি):

মানিকছড়ি বাটনাতলী বাজারসহ গুচ্ছগ্রাম এলাকাটি জনবহুল।  প্রতিটি ঘরে এবং বাজারের শতাধিক দোকানে অসংখ্য টিউবওয়েল। পানির লেয়র ৭০/৮০ ফুট গভীরে। তারপরও কোন জনপ্রতিনিধিকে না জানিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে জিওবি-ইউনিসেফের ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানি সরবরাহ প্রকল্প করা হয়েছে নামে-মাত্র! নির্মাণের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত এক ফোঁটা পানি পায়নি কেউ! যদিও এর ব্যবহার নিয়ে রয়েছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। ফলে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।

সরেজমিন ঘুরে এবং জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মানিকছড়ি বাটনাতলী বাজার সংলগ্ন গুচ্ছগ্রামসহ চারশতাধিক পরিবারের বসবাস। প্রতিটি পরিবার এবং বাজারে মিলে প্রায় দেড়শতাধিক টিউবওয়েল সচল আছে। এখানে পানির স্তর মাত্র ৭০/৮০ ফুট নীচে। বলতে গেলে পানির সংকট নেই এখানে। তারপরও কেন এখানে সরকারের বিশাল অর্থে এ প্রকল্পটি দেয়া হয়েছে তা কেউ জানে না! সুবিধাভোগি কিংবা জনপ্রতিনিধি কাউকে না জানিয়ে পঁচিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অহেতুক এ প্রকল্পটি দায়সারাভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ীসহ জনপ্রতিনিধিরা।

গতকাল সরজমিনে গেলে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক মো.হাফিজুল্লাহ, ব্যবসায়ী হামিদ, রফিক , সফিক , কামাল, নূর মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা মো.কাইয়ূম ও ইউপি চেয়ারম্যান মো শহিদুল ইসলাম মোহনসহ অনেকের সাথে। তাঁরা জানান, বাটনাতলী সদরে পানির সংকট নেই। অহেতুক কার সিদ্ধান্তে  ইউনিসেফ এ জায়গাটি শনাক্ত করেছে এলাকার কোন ব্যক্তি তা জানে না। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এটি আরো দূর্গম এলাাকায় বসানো উচিত ছিল। অযথা এটি এখানে বসানো হয়েছে। এছাড়া এটির জেনারেটর বিল কে পরিশোধ করবে তা কেউ জানে না।

বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে অনেকটা দায়সারাভাবে। এটির নির্মাণ কাজ নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ, কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মেকানিক ও শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলীর ইচ্ছার কারণে যেন-তেনভাবে ঠিকাদার কাজটি শেষ করেছে। ৩ বছর আগে গভীর নলকূপটি বসানোর কাজ শেষ হলেও পাইপ লাইনের এখনো ২০% কাজ বাকী। জেলার প্রভাবশালী ঠিকাদার  মংশেপ্রু চৌধুরী অপু এ কাজটি করেছেন।

বাজারের পাশে ৬০ শতক ধান্য জমির পাশে নীচু জায়গায় এটি বসানো হয়েছে। নলকূপের ১০ গজ দূরে বসবাসকালীরা  কামাল হোসেন জানালেন,যেদিন নলকূপটির কাজ শেষ হয়েছিল সেদিন পরীক্ষামূলক একটু পানি দেখেছি। আজ পর্যন্ত আর এক ফোঁটা পানি তুলতে দেখেনি। এ গভীর নলকূপটি একশ-দেড়শত ফুট গভীর এবং ৮৫ হাজার টাকা দামে একটি জেনারেটর, ১২দ্ধ১৪ ফুট একটি ছাদ বিশিস্ট ঘর, এবং পানি সরবরাহের জন্য ১ হাজার ফুট পাইপ লাইন ছাড়া কিছুই করা হয়নি। বড়জোর ব্যয় হয়েছে ৮/১০ লক্ষ টাকা  ।

কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী আনছারী এক বাক্যে বলেন, কাজ শতভাগ ভাল হয়েছে। স্থানীয়দের নিজস্ব খরচে জেনারেটর বিল দিয়ে এটি ব্যবহার করতে হবে। যদিও জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মানিকছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন