মারমা দুই বোনকে মাতাপিতার জিম্মায় দেয়ার উচ্চ আদালতের আদেশটি নৈতিকতা বিরোধী


নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটির বিলাইছড়িতে কথিত নির্যাতিত দুই কিশোরীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে নাগরিক সমাজের ব্যানারে ৬টি সংগঠন। শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের সাবারং রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, হিমাওয়ান্তি, উইমেন্স রিসোর্স নেটওয়ার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্ক, কার্বারী নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর নেতৃবৃন্দ সংবাদ সন্মেলনে অভিযাগে করে বলেন, মারমা দুই কিশোরীকে উচ্চ আদালত তাদের পিতা-মাতার জিম্মায় দিতে যা আদেশ প্রদান করে তা নৈতিকতা বিরোধী। উচ্চ আদালত নৈতিকতা বিরোধী আদেশ প্রদান করেছেন বলে তারা জানান।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চাকমা রানী ইয়েন ইয়েনসহ ভলান্টিয়ারদের ওপর বর্বরোচিত হামলায় রাঙামাটির নাগরিক সমাজের গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাইকোর্টের এক আদেশ মোতাবেক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও সাদাপোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর পুরুষ ও নারী সদস্যরা ভূক্তভোগী দুই বোনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের বাবা-মায়ের হেফাজতে দেওয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক তুলে অজ্ঞাত স্থানের দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনার সময় ওয়ার্ডে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর নারী ও পুরুষ সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এদের মধ্যে নারী সদস্যরা ওড়না দিয়ে তাদের মুখ বেধে রাখে এবং পুরুষরা মাক্স পড়া অবস্থায় ছিলো। জরবদস্তিমূলক আচরণ ও রানী ইয়েন ইয়েনসহ ভলান্টিয়ারদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং একই সাথে এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাগরিক সমাজ মনে করে চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী ইয়েন ইয়েন এর ওপর হামলা পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহি প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার সামিল। তদুপরি এই হামলা পার্বত্য চুক্তির অভিপ্রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচদফা দাবি জানানো হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো: উক্ত হামলার তদন্তে একটি কমিটি গঠন, হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া দুই বোনের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করে একটি সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন আদালতে দাখিল, হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচার ও শাস্তির আওতায় আনা, দুই মারমা তরুনীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চাকমা রাজ পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সকল শুভাকাঙ্ক্ষিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, উক্ত দুই মারমা কিশোরী তাদের পিতা-মাতার হেফাজতে না গিয়ে চাকমা সার্কেল চীফের হেফাজতে যেতে চায়। এই লক্ষ্যেই বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে নির্দেশনা চাওয়া হয়। সেটি এখনো পর্যন্ত সমাধানে অপেক্ষমান থাকাবস্থায় মেয়েগুলোর পিতার আরেকটি আবেদন আমলে নিয়ে অন্য বেঞ্চ একটি আদেশ প্রদান করেছেন। নৈতিকতার বিরুদ্ধেই উক্ত আদেশ প্রদান করেছে উচ্চ আদালতের উক্ত ব্র্যাঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে হামলার শিকার হওয়া কারোই উপস্থিতি না থাকার বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় রেখে এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনায় তাদেরকে এখানে উপস্থিত রাখা হয়নি।

সংবাদ সন্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, শিক্ষাবিদ মংচানু চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকারের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, টুকু তালুকদার এবং হেমন্তি চাকমাসহ সংগুলোর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন