মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ১৩৬ জন বৌদ্ধ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশে বান্দরবান জেলার গহীন এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তে শূন্য রেখায় মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা ১৩৬ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আশ্রয় নিয়েছে বলে জানাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

বিজিবির বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জহিরুল হক খান বলছেন, মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষজন নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে এসেছেন বলে জানাচ্ছেন। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করছেন।

মূলত খুমি, মার্মা এবং খিউ সম্প্রদায়ের মোট ৩৮ টি পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু সেখানে অবস্থান নিয়েছে বলে জানাচ্ছে বিজিবি। যদিও স্থানীয়রা বলছেন তারা বাংলাদেশের অংশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমেও এমনটাই বলা হচ্ছে।

জহিরুল হক খান বলছেন, ফেব্রুয়ারির তিন তারিখ তারা প্রথম এমন খবর পান যে রুমা উপজেলার রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের চাইক্ষাং সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বৌদ্ধরা অনুপ্রবেশ করেছে।

তিনি বলছেন, “অঞ্চলটি এতটাই দূরে এবং প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা, যে রুমা থেকে হেঁটে যেতে দেড় দিন সময় লাগে এবং আর কোনভাবে সেখানে যাওয়ার উপায় নেই।”

বিজিবির একটি টহল আজ বিকেলে ঐ অঞ্চলে পৌঁছে তাদের সাথে কথা বলেছেন।

মি. খান বলছেন, “তাদের ভাষাগত একটু সমস্যা আছে। তাদের যখন স্থানীয়দের সহায়তায় জিজ্ঞেস করা হল যে তারা কেন এসেছেন, তারা জানাচ্ছে যে গত দশদিন ধরে তাদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন চলছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে। সেই জন্যেই তারা ভয়ে পালিয়ে এসেছে।”

তবে হেলিকপ্টার থেকে কারা গুলি করছে সেই বিষয়েও তথ্য দিতে পারেননি মি. খান।

আশ্রয় নেয়া এই লোকগুলোর বাড়িঘরও সেখান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বলে জানাচ্ছেন তিনি। পরিস্থিতি ভালো হলে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন বলে বিজিবি সেনাদের জানিয়েছেন।

মি. খান অবশ্য বলছেন, তারা পানি সংগ্রহ করতে এবং মাঝে মাঝে দোকানে কেনাকাটা করতে বাংলাদেশে অংশে আসছেন এবং আবার শূন্য রেখায় ফিরে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের খাবার সাথে করে নিয়ে এসেছেন বলেও দাবি করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।

যদিও রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের স্থানীয় একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সেখানকার গ্রামবাসীরা তাদের নিজেদের বাড়িঘরে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে বৌদ্ধ শরণার্থীরা
বাংলাদেশে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় দেড় বছরে সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করলেও মিয়ানমার থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের পালিয়ে আসা নিয়ে নতুন আশংকা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের সরকার ইতিমধ্যেই এমন আশংকায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিজিবি বলছে ওই এলাকায় সীমান্তে এখন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, টহল বাড়ানো হয়েছে।

এলাকার জনগণকেও কোন ধরনের অনুপ্রবেশ হলে খবর দিতে বলা হচ্ছে। সেখানে গোয়েন্দাদের তথ্য-দাতা নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন