মিয়ানমারের পথে পথে ‘মুসলমানমুক্ত এলাকা’ সাইনবোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
ঢাকায় ঝটিকা সফরে এসে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মিয়ানমারের কেবিনেট মন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ে। অথচ অন্যদিকে মংডুতে তার দেশের সেনা বাহিনি ও উগ্র মৌলবাদী রাখাইন মগরা রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে মাইকিং ও ব্যানার টাঙিয়েছে।
মংডু ও এর উপকন্ঠে অবস্থিত গ্রামগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা এতথ্য জানাচ্ছেন এ পাশে থাকা স্বজনদের। এ নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও পড়েছে জটিল সমীকরণের ফাঁদে।
সদ্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেবল দেশে ফেরত নেওয়াটাই সংকটের সঠিক সমাধান নয়। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এটা হয়তো আন্তর্জাতিক চাপে সৃষ্ট ঘায়ে ‘মলম’ লাগানোর চেষ্টা মিয়ানমারের। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য অবশ্যই দেশটিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে সে দেশের আরো ১৩৫টি জনজাতির মতো স্থায়ী সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিতে হবে। একই সঙ্গে সেই দেশের অন্য সবার মতো সব সুযোগ সুবিধা ভোগের অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। দিতে হবে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনেরও অধিকার।
রাখাইনের বহু গ্রামের প্রবেশপথে দেখা মিলবে অদ্ভুত এক ধরনের সাইনবোর্ডের। তাতে বার্মিজ ভাষায় বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘মুসলমান মুক্ত এলাকা’। সঙ্গে থাকে আরও নানা মুসলিম বিদ্বেষী কথাবার্তা। অবশ্য শুধু রাখাইন নয়, মিয়ানমারের অন্যান্য এলাকায়ও এমন সাইবোর্ডের দেখা মেলে প্রায়ই।
মানবাধিকার সংগঠন বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক (বিএইচআরএন) এ রকম ২১টি সাইনবোর্ডের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। সংস্থাটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, এ ধরনের মুসলিম বিদ্বেষী সাইনবোর্ডের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।
অবাক করা বিষয় হলো, এসব বিদ্বেষমূলক সাইন বোর্ড ঝোলানোর জন্য স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়ে থাকে! মিয়ানমারের শান প্রদেশের ইয়াসাউক শহরে থেকে বিএইচআরএন’র তোলা একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘মুসলমানমুক্ত এলাকা’। তার নিচে তিনটি পয়েন্টে লেখা:
১. এই এলাকায় রাতে মুসলমানদের থাকার অনুমতি নেই। ২. মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রি বা কেনার অনুমতি নেই। কোনো মুসলমানকে বিয়ের অনুমতি নেই। এই বোর্ডটি লাগিয়েছে ‘দেশপ্রেমী যুবসংঘ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন।
এ ধরনের নানা মুসলিম বিদ্বেষী সাইনবোর্ডের পাশাপাশি রয়েছে বৌদ্ধ ধর্ম ও জাতিকে ‘সবার চেয়ে সেরা’ হিসেবে তুলে ধরে বিভিন্ন বক্তব্য।
বিএইচআরএন’র নির্বাহী পরিচালক কিয়াও উইন বলেন, এ ধরনের বোর্ড লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারি কতৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় মদদে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিদ্বেষী মনোভাবের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিমরা। সেখানে সেনা বাহিনী জাতিগত নিধন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। সর্বশেষ গত ২৫ অগাস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।