রাখাইনে আরাকান আর্মি দমনের নামে জনগণের ওপর নির্যাতন করছে সেনাবাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। সেনারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের সোনা, অলংকার, মোবাইলফোন, ও নগদ অর্থ লুট করছে বলে অভিযোগ  করেছে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।

আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে নিরাপরাধ নাগরিকদের ভুক্তভোগী বানানোরও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।বিভিন্ন বাড়ির দেয়াল গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে সেনারা।

তবে সেনাবাহিনী এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কোনও অভিযানই চলছে না সেখানে। মিয়ানমার সংসদের নিম্ন কক্ষের একজন ও রাখাইন প্রাদেশিক পরিষদের একজন সংসদ সদস্য সংবাদমাধ্যম ইরাবতিকে জানিয়েছেন, স্থানীয়দের এসব অভিযোগের পাশাপাশি অভিযানে এক শিশুর মৃত্যু হওয়ার বিষয়েও তারা তদন্তের দাবি জানাবেন।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও সংখ্যাগুরু বামারদের চেয়ে নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে ভিন্ন রাখাইনের আরাকানিরা। নিজেদের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চাওয়া মিয়ানমারের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি। আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে প্রায় এক দশক আগে শুরু হয় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরাকনি গ্রামবাসীদের হতে হয়েছে বাস্তচ্যুত। গত ২৫ জানুয়ারি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যে বৌদ্ধরা মাত্র ১৮ মাস আগে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে, বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আজ তাদেরকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে।

রাখাইন প্রদেশের রথেডং টাউনশিপের একটি গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) অভিযান চালিয়েছিল। গ্রামবাসীদের দেওয়া তথ্য থেকে তাদেরকে চিহ্নিত করা গেছে। রাখাইন প্রাদেশিক পরিষদের একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, ৯৯তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সেনা সদস্যরা দূরনিয়ন্ত্রিত মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে হামলার শিকার হওয়ায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তাদের অভিযানের সময় আহত সাত বছরের একটি শিশু। প্রথমে তাকে সিতওয়ে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় ইয়াঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

৯৯তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী সোনা, অলংকার, নগদ অর্থসহ কয়েক ডজন মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। উ থান নাইং নামের রাখাইন প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ঘর-বাড়ি দেখেছেন। রাখাইন প্রাদেশিক পরিষদে তিনি এসব ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবেন । উ থান নাইংয়ের ভাষ্য, ‘আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। আমি একটি অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করব এবং একই সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইব। দুই পক্ষেরই উচিত সংঘাত বন্ধ করা এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে উপনীত হওয়া।’

মিয়ানমার সংসদের নিম্ন কক্ষের সংসদ সদস্য ড খিন সঅ ওয়েই ইরাবতী কে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে কিন্তু জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নিরপরাধ সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি আমার কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। স্থানীয়রা আমার কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষর উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করা।’

মিয়ানমারের আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন, নিরীহ নাগরিকরা নিপীড়িত হচ্ছেন সন্দেহের শিকার হওয়ার সূত্রেও। আরাকান আর্মিকে সহায়তা করে, এমন সন্দেহে ‘আনলফুল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাক্টের’ ধারা ব্যবহার করে নাগরিকদের অভিযুক্ত করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দুই সংসদ সদস্যই সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে বলেছেন, সেনাবাহিনী প্রধানের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দেবেন তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধানের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী সেখানে কোনও অভিযান পরিচালনা করছে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন