“ ১৯৯৯ সালের ২৮ জুন খাগড়াছড়ি থেকে ফেরার পথে জালিয়াপাড়া রামগড় সড়কের মাহবুবনগর নামক স্থানে গুলি ও জবাই করে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে খুন করা হয়।”

রামগড়ে আ’লীগ নেতা ইয়াছিন হত্যার বিচার হয়নি ২০ বছরেও

fec-image

রামগড়ের তরুণ আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ ইয়াছিনের হত্যার বিচার হয়নি দীর্ঘ ২০ বছরেও। আলোচিত এ হত্যার বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। ১৯৯৯ সালের ২৮ জুন খাগড়াছড়ি থেকে ফেরার পথে জালিয়াপাড়া রামগড় সড়কের মাহবুবনগর নামক স্থানে গুলি ও জবাই করে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে খুন করা হয়।

ঐদিন বিকেল ৫টার দিকে নিজের প্রাইভেট কার চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মাহবুব নগরে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথারিভাবে হাত বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে তারা। প্রাণ বাঁচাতে তিনি গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে রাস্তার পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ঐ জঙ্গলের ভিতরেই প্রথমে গুলি এবং পরে জবাই করে তাকে হত্যা করে।

এ সময় গাড়িতে থাকা নিহত ইয়াছিনের সঙ্গী বাদশা মিয়া, ক্যাপ্টেন ফারুক, দুলাল ও টিটু অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে প্রাণ বাাঁচায়। এ ঘটনায় নিহত ইয়াছিনের পিতা মো. সফিকুর রহমান ৩১জনকে আসামি করে রামগড় থানাায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি সকলেই স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী। হত্যার ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার বাসা আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

১৯৯৭ সালে রামগড় বাজার পরিচালনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ইয়াছিনের সাথে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা বেলায়েত হোসেন ভুইয়ার মতবিরোধ শুরু হয়। দ্বন্দ্বের জের ধরে ১৯৯৮ সালের আগস্টে মো. ইয়াছিন ছাত্রদল ও বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের খাগড়াছড়ির এমপি ও পার্বত্য মন্ত্রী কল্প রঞ্জন চাকমার হাতে ফুলের মালা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তরুণ নেতা ইয়াছিনের নেতৃত্বে রামগড়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় হয়ে উঠে। অল্প সময়ের মধ্যে তার রাজনৈতিক উত্থানে অনেকেরই পথের কাঁটা হয়ে উঠেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাঁকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়।

জানাযায়, পুলিশ মামলার দীর্ঘ তদন্তের পর এজাহারভুক্ত আসামীদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালতে পেশ করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। হিমাগারে চলে যায় বহুল আলোচিত হত্যা মামলাটি। নিহত ইয়াছিনের পরিবারের কেউ মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোন কিছু জানাতে পারেনি। মামলার বাদি ইয়াছিনের পিতা সফিকুর রহমানও ২০১৭ সালে মারা যান।

তাদের এক নিকটাত্মিয় মো. নিজাম উদ্দিন জানান, গত বিএনপির শাসন আমলে মামলার বাদিসহ ইয়াছিনের স্ত্রী, স্বজনদের কাছ থেকে জোর করে ‘আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই’ মর্মে লিখিত দলিলে স্বাক্ষর নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মামলাটি এখন আছে, না কি শেষ হয়েে গেছে আমরা কেউ জানি না।

নিহত ইয়াছিনের একমাত্র সন্তান রামগড় সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরমান বাবার নৃশংস হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘২৮ জুন এলেই তাঁর কথা স্মরণ করা হয়। কিন্তু তাঁর হত্যার বিচারের জন্য কেউ কোন টু শব্দটিও করে না। রামগড়ে আওয়ামী লীগের উত্থানের জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই তাঁকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে খুন করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগের শাসনামল চলছে। অথচ আওয়ামী লীগের এ নেতার হত্যার বিচার হয়নি এখনও।’

মাত্র সাড়ে ৩ বছর বয়সে পিতৃহারা আরমান আরও বলেন,‘ দলের কেউ কখনও আমাদের খোঁজখবর পর্যন্ত নেন না। বেকার পড়ে আছি, কোথাও একটা চাকুরির সুযোগও কেউ দিচ্ছেন না।’

এদিকে, আজ শুক্রবার(২৮ জুন) মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিহত ইয়াছিনের ঘনিষ্ঠজনরা রামগড় কেন্দ্রিয় কবরস্তানে তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জেয়ারত এবং বাদ জুমায় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রামগড়ে, হত্যার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন