রামগড় জিবি হর্টিকালচার হতে পারে এক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট

Ramgarh 20

মো:নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড় : 

কোথাও উচুঁ, কোথাও নিচু, ছোট বড় মাঝারি পাহাড়। পাহাড় জুড়ে সারি সারি আম্রপালি আম, লিচু, কাঁঠাল বাগান। কোথাও আবার আগর, আকাশমনি, মেহগনি গাছ। আরো আছে চন্দন, লম্বু, নিম। ফলদ, বনজ বন বনানী ঘেরা পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে সুদীর্ঘ লেক। সবুজ আবৃত পাহাড় টিলাগুলো যেন জলরাশির উপর ভাসমান ভেলা। উচুঁ পাহাড়ের চূড়া থেকে এ চিত্রটি আবার অন্য রকম দৃশ্যপট ধারণ করে। মনে হয়, ঘন সবুজ অরণ্য ভূমির বুক চিরে চলে যাওয়া আকাঁবাকাঁ ছোট কোন নদী। রামগড়ের গ্রীণ বাংলা (জিবি) হর্টিকালচারের এমন শিহরণ জাগানিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে হয়, এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গপুরী। এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট।

বাংলাদেশের প্রধান বনজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা সদর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে জিবি হর্টিকালচারের অবস্থান। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি উদ্যান। সাড়ে চারশ’ একর আয়তনের এ সুবিশাল উদ্যোনে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টি পাহাড় বা টিলা আছে। এ টিলাগুলোকে সাজানো হয়েছে নানা জাতের ফলদ, বনজ, মসলা ও ঔষধি বৃক্ষরাজিতে। বিভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন রুপ ধারণ করে উদ্যোনটি।

বামন আকৃতির গাছে গাছে আম্রপালি আমের দোল খাওয়া কিংবা সবুজের মাঝে লাল শাড়ির ঢেউ খেলানোর মত থোকায় থোকায় টুকটুকে লাল লিচুর দৃশ্য মনকাড়ে যে কারোর। পাহাড় জুড়ে সারিসারি আগর গাছের সুশীতল ছায়াতলে ক্ষণিক বসে প্রাণ জুড়ানো যায়। বন্ধুর পথ চলায় ক্লান্তি কিংবা পিপাসা মেটাতে হাতের নাগালে থাকা একটি আমলকিই যথেষ্ট। সাজানো গোছানো গাছ-গাছালির ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় ছড়ানো ছিটানো নাম না জানা বাহারি বনফুল। হরিণ, বানর, বন্য শুকর, শিয়াল আর জংলী সাপের সাক্ষাতও মেলে এখানে।

বনমোড়গ, মধুরা, ময়না, টিয়া আরও কত কী পাখ-পাখালির বিচরণ চোখে পড়ে। নি:স্তব্দ পরিবেশে হঠাৎ কোকিল, বউ কথা কউ বা ঘুঘুর সুমধুর কলতানে মনে জাগে এক অন্য রকম ছন্দ। শরৎ, হেমন্ত ও শীতে শুভ্র মেঘের খেলাও দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। উদ্যানের একটি বিশাল অংশ ঘিরে প্রবাহমান পৌণে এক কিলোমিটার দীর্ঘ লেক এ আরণ্যক সৌন্দর্যকে করেছে আরও মনোমুগ্ধকর। শীতে এখানে দেখা যায় অতিথি পাখির বিচরণ। পুরো উদ্যোনটি ঘুরে শুধু নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ নয়, প্রকৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার একটি চমৎকার স্থানও বটে। কারণ এখানে প্রচলিত, অপ্রচলিত ও বিলুপ্ত প্রায় হরেক রকম দেশী, বিদেশী ফলফলাদি, ওষুধি ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। বৃক্ষরাজির বৈচিত্র্য সমারোহের জন্য জিবি হর্টিকালচার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালের দেশের অন্যতম সেরা বাগানের পুরস্কার লাভ করে।

যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা গেলে জিবি হর্টিকালচার হয়ে উঠবে অন্যতম এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এমনই সম্ভাবনার কথা বলেছেন এ উদ্যানটি স্বচক্ষে দেখে আসা সৌন্দর্য পিপাসুরা। গ্রীণ বাংলা বা জিবি হর্টিকালচারের পরিচালক অমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা মাথায় রেখেই উদ্যানটি ফলফলাদি আর বনজ বাগান বাগিচায় শোভিত করা হয়েছে। পাহাড়ের ঝিঁরিতে বাঁধ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে সুদীর্ঘ লেক। এখন পরিকল্পনামত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন হলেই এটি পরিণত হবে একটি পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে ।

তিনি বলেন, ফেনী রামগড় খাগড়াছড়ি সড়কের নাকাপা বাজার হতে উদ্যান পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রিক সলিন রাস্তাটি কার্পেটিং প্রয়োজন। পার্বত্য জেলা পরিষদ বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ কাজটি করতে পারে। এছাড়া বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ করা দরকার। সর্বোপরী নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প বা ফাঁড়ি স্থাপন আবশ্যক। এসবের জন্য সরকারি সার্পোট প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা পেলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তাঁরা নিজেরাই করবেন।

রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো: ইকবাল হোসেন বলেন, এখানকার ভৌগলিক প্রকৃতি, পরিবেশ ও অবস্থান পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য শতভাগ উপযোগী। এ শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে এ পার্বত্যাঞ্চল হবে দ্বিতীয় মালয়েশিয়া।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম (আলমগীর) বলেন, বিশাল প্রাকৃতিক লেকের উপর ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটন টাওয়ার, কটেজ ইত্যাদি স্থাপনা নির্মাণ করা হলেই জিবি হর্টিকালচার পরিণত হবে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে ।

স্থানীয় উপজাতীয় নেতা মনিন্দ্র ত্রিপুরার অভিমত, এটি পর্যটন স্পটে রুপান্তরিত হলে এখানকার অধিবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও বিপ্লব ঘটবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন