রামগড় সীমান্তে বারুণী মেলায় লাখো মানুষ
রামগড় প্রতিনিধি:
ঐতিহ্যবাহী বারুণী স্নানোৎসবকে ঘিরে বৃহষ্পতিবার খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের সাবরুম সীমান্তে সমবেত হয়েছে লাখো মানুষ।
সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কড়াকড়ি অবস্থানের দরুণ দুপাড়ের লাখো মানুষ এখনও পারাপারের সুযোগ পাচ্ছে না। অন্যান্য বছর এ বারুণী স্নানোৎসবে সীমান্ত নদী ফেনী পরিনত হয় দু’দেশের মানুষের মিলন মেলায়।
বৃটিশ আমল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে প্রতিবছর ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হন দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। তারা পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পন করে এখানে।
নদীর দুই তীরে দুই দেশের পৌরহিতরা সকালেই বসেন পূজা অর্চণার জন্য। পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পুণ্যলাভ ও সকল প্রকার পাপ, পংকিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ফেনী নদীর বারুণী স্নানে ছুটে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বী আবালবৃদ্ধবণিতা।
স্নানোৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এখন তা সার্বজনিন উৎসবে পরিণত হয়েছে। দুই দেশে অবস্থানকারী আত্মীয়- স্বজনদের দেখা সাক্ষাৎ করার জন্যও অনেকে দূর দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন।
ঐতিহ্যবাহী এ বারুণী মেলা উপলক্ষে বহুকাল থেকেই এদিনে দু’দেশের সীমান্ত অঘোষিতভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকার সুবাদে এপার বাংলার মানুষ ছুটে যায় ওপারের সাবরুম মহকুমা শহরে, আবার ওপারের লোক এসে ঘুরে যান রামগড়।
এ মেলাকে ঘিরে দু’দেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন। কিন্তু এবার প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের কারণে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ না পেয়ে চরম হতাশ হয়েছেন দূরদূরান্ত হতে ছুটে আসা লাখো মানুষ।
মেলা উপলক্ষে দুদেশের ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমান মালামাল মজুদ করে বেচাবিক্রির জন্য। সীমান্তখোলা না থাকায় ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত। সীমান্তের ওপার হতে জানাযায়, বিএসএফ ও মহকুমা প্রশাসন সীমান্ত উন্মুক্ত না করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এনিয়ে তারা একাধিকবার বৈঠকও করেছে।
এদিকে, বৃহষ্পতিবার ভোর বেলা হতে ফেনী নদীর বাজার ঘাট এলাকায় পুর্ণ্যার্থীসহ লোকজন সমাগম হতে থাকে। সীমান্তের ওপারেও ভারতীয়রা জড়ো হয়। সকাল থেকে নদীর তীরে দুই দেশের পৌরহিতরা পূজার আসনে বসেন। শুরু হয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। স্নান পর্ব শুরু হলেও সীমান্ত পারাপারে বাধা দেয় বিজিবি-বিএসএফ।
বারুণী মেলায় যোগ দিতে চট্টগ্রাম, ফেনী কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ রামগড়ে ছুটে আসেন।
এবার উভয় সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সীমান্তরক্ষীবাহিনীর পাশাপাশি দু’দেশের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।