রামুতে রেল লাইনের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বসতি উচ্ছেদকালে স্ট্রোক করে গৃহবধূর মৃত্যু

রামু প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের রামুতে রেল লাইনের ক্ষতি পূরণের টাকা না পাওয়ার আগেই বসত বাড়ি উচ্ছেদের চেষ্টাকালে ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেছেন এক গৃহবধু। নিহত খালেদা বেগম (৫২) রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের সাতঘরিয়াপাড়া এলাকার আজিজ মিয়ার স্ত্রী। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাণ হারান তিনি।

খবর পেয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান, ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম ও রামু থানার উপ-পরিদর্শক ছানা উল্লাহ ঘটনাস্থলে যান। এসময় ইউএনও নিহত খালেদা বেগমের পরিবারকে মৃতদেহ দাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।

নিহত খালেদা বেগমের বড় ভাই নুরুল আলম জানিয়েছেন, রেল লাইনের অধিগ্রহণকৃত জমিতে তার ছোট বোন খালেদা বেগমের পৈত্রিক বাড়ি-ভিটে ছিলো। কিন্তু মামলাবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত ইটভাটা মালিক মোজাফ্ফর আহমদ বোনের অসহায়ত্বের সুযোগে ভিটে-জমিটি গ্রাস করার উদ্দেশ্যে উল্টো হয়রানিমূলক মামলা করেন। যার কারণে রেল লাইনের কাজ শুরু হলেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছিলেন না খালেদা বেগম।

নুরুল আলম আরও জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৯ শতক জমিতে ২০ বছর ধরে বসত বাড়ি তৈরি করে স্ব-পরিবারে বসবাস করে আসছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা খালেদা বেগম। মৌখিক দানপত্র করার ভূয়া তথ্য দিয়ে একটি মামলা করে ২০১৩ সালে বিজ্ঞ আদালত থেকে ডিক্রি নিয়ে জমিটি জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বিতর্কিত ইটভাটা মালিক মোজাফ্ফর আহমদ।

পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে দিশেহারা খালেদা বেগম ওই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। যা এখনো বিচারাধিন রয়েছে। পরে জমিটি রেল লাইনে অধিগ্রহণকরা হলেও এ কারণে ক্ষতিপূরণও পাচ্ছিলেন না তিনি। কিন্তু রেলের ঠিকাদার ও কাজে নিয়োজিত লোকজন খালেদা বেগমকে বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে জমি দখলমুক্ত করার জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। সম্প্রতি রেল লাইনের কাজ চলাকালে খালেদা বেগমের গাছ কেটে সাবাড় করা হয়। এ দৃশ্য দেখে আহাজারি করার সময় ব্রেইন স্ট্রোক করেন তিনি। বোনের মৃত্যুতে তার ৪ ছেলে, ২ মেয়ে অসহায় হয়ে পড়লো।

খালেদা বেগমের বড় ছেলে হারুন জানান, মায়ের মৃত্যুর জন্য ভূমিদস্য মোজাফ্ফর আহমদই দায়ি। কারণ তিনি মামলা দিয়ে হয়রানি না করলে এতদিনে আমরা রেলের ক্ষতিপূরণ পেয়ে অন্যত্র জমি কিনে বসবাস করতে পারতাম। তিনি এ ভূমিদস্যুর কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন এবং অবিলম্বে জমির ক্ষতিপুরণ পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ সহসা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়া নিহত খালেদা বেগমের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। প্রভাবশালী কর্তৃক দরিদ্র খালেদা বেগম নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। রেলের কাজ শুরু হলেও তার বাড়ি-ভিটে উচ্ছেদ শুরু হয়েছে, তাই তিনি ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। যে কারণে স্ট্রোক করে প্রাণ হারিয়েছেন। এখন জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন