রেঙ্গুন-মান্দালয়ের মুসলমানদের প্রতি কঠোর নির্দেশ, বিপন্ন রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়াও করা যাবে না


কাফি কামাল: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে রেঙ্গুন ও মান্দালয়ে বসবাসরত মুসলমানদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। শাসিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলিম কমিউনিটির নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মসজিদের ইমামদের। পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাস্তাঘাটে কোনো ধরনের প্রতিবাদের আয়োজন করা যাবে না। মসজিদের জুমার খুতবা কিংবা বিশেষ মোনাজাতে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো কথা বলা যাবে না। তাদের জন্য মানবিক কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। গণমাধ্যম কিংবা কোথাও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

স্থানীয় প্রশাসন ও অং সান সুচি’র দল ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে তাদের এ নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি শাসানো হয়েছে।

রেঙ্গুনে বসবাসরত একজন বিদেশি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মসজিদের সীমিত পরিসরে হলেও মুসলমানরা তাদের জন্য দোয়া করতেন। এবার তেমন কিছুই নেই। রেঙ্গুন ও মান্দালয়ের পরিস্থিতি দৃশ্যত শান্ত ও স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই প্রধান শহরসহ অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত মুসলমানরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পরিস্থিতি এতটা গুমোট যে, রেঙ্গুনের মুসলমানরা ভয়ে অন্যান্য সময়ের মতো দলবেঁধে সন্ধ্যাকালীন আড্ডা পর্যন্ত দিচ্ছেন না। রেঙ্গুনের চেয়েও বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন মান্দালয়ের মুসলমানরা। কারণ অতীতে বিভিন্ন সময়ে সেখানে মুসলমানরা হামলার শিকার হয়েছেন।

ওই ব্যবসায়ী বলেন, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও সেটা কেবল নামে মাত্র। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে। তারা বার্মায় মুসলমানদের মোটেই সহ্য করতে পারে না। এই জন্য দীর্ঘদিন থেকে জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে আসছে। সেনাবাহিনী এ কাজে বুড্ডিস্ট মঙদের (ধর্মগুরু) সফলভাবে ব্যবহার করছে। ফলে মিয়ানমারের লোকজন রোহিঙ্গাদের প্রতি ঘৃণা তো বটেই সে দেশের মুসলমানদেরও সহজ চোখে দেখে না। তারা বাংলাদেশ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘কালা’ শব্দটিকে গালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এমন অপপ্রচার চালানো হয় যে, দেশটির বেশিরভাগ মানুষের মনে সেটা স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। যার সুফল হিসেবে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচি’র দল এনএলডি, মঙ ও মিয়ানমারের জনগণকে একসুঁতোয় গেঁথে ফেলেছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই মুহূর্তে পুরো মিয়ানমারের জনগণ ঐক্যবদ্ধ।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে নানামুখী চাপের মধ্যে পড়েছে মিয়ানমার। যারা এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তারাও সে চাপ টের পাচ্ছেন। কিন্তু মিয়ানমার সরকার সে চাপের বিষয়টি প্রকাশ করছে না।

সূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন