রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ২ বছর; প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গ্যাঁড়াকলে ব্যাপক সমাগমের প্রস্তুতি

fec-image

মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনী ও রাখাইন জনগোষ্ঠির নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রবিবার (২৫ আগস্ট) ২ বছর পূর্ণ হবে। এই লক্ষে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ব্যাপক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা উখিয়ার ২২টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ডি-৪ নামক স্থানে জমায়েত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাল্খুালী ক্যাম্পের বাসিন্দা ও ভয়েচ অব রোহিঙ্গা নামের সংগঠনের নেতা মাস্টার নুরুল কবির।

২৫ আগস্ট প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে ভয়েচ অব রোহিঙ্গা নামের একটি সংগঠনের লোগো সহ গেঞ্জি, ছবিটি উখিয়া স্টেশন থেকে তোলা

তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্রতিটি ক্যাম্প কমিউনিটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। স্ব স্ব ক্যাম্পে তারা ব্যানার, ফেস্টুন বিতরণ করেছেন। তবে তারা সু-শৃংখল ভাবে দিনটির কর্মসূচি পালন করবেন। ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমার সেনা বিজিপির নির্যাতনে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয় বাংলাদেশে।

অনুপ্রবেশকারী এ সব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কুটনৈতিক ভাবে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এ সব রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চীন সফর করেন। চীন সফরে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উপর জোর দেন। এর পরপরই মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন।

এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের নির্যাতনের বর্ণনার পাশাপাশি নাগরিকত্বসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেন। তাদেরকে গত ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেন।

দু’দেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত কোন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় ওইদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম। তিনি প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই আজকেও যদি কেউ স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায় তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর একই ভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় না ফেরে তাও বাধাগ্রস্থ হয়। যার ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গ্যাঁড়াকলে পড়ে।

প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। যার কারণে জটিল হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

উখিয়া প্রসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২২ আগস্ট সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরও রােহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার পেছন সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর পূর্বে অভিজ্ঞ সম্পন্ন লোকজনকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান তিনি।

রােহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত ২ বছরে ক্যাম্পে রােহিঙ্গারা যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে তারা সহজে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে মনে হয়না। তাই সরকারের উচিত তাদেরকে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ২ বছরেও আলোর মূখ না দেখায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। কারণ রোহিঙ্গারা দিন দিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

উখিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সব ধরনেরর প্রস্তুতি থাকার পরও রােহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে না ফেরার কারণে ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই যারা স্ব-ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হবেন, তাদেরকেই ফেরত পাঠানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রাখাইন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন