“রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্র পাল্টে যায় অনেকে মুখোশ পরিবর্তন করে ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। কথিত আছে অনেক রোহিঙ্গাদের রয়েছে অস্ত্র গুলাবারুদ।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, আতঙ্কে স্থানীয়রা!

fec-image

মানবতার শহর খ্যাত কক্সবাজার জেলায় এখন বসবাস করছে প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। মিয়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতন নিপীড়নে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, আশ্রয় নেন কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফে।

রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি কাজ করছে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০০শ এনজিও। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ২ বছরে তাদের জীবন-যাপনে এসেছে আমুল পরিবর্তন। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনে হয়েছেন স্বয়ং সম্পূর্ণ। এত কিছুর পরও রোহিঙ্গারা সন্তুষ্ট নয়। অধিক ত্রাণ ও সুযোগ সুবিধার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি এনজিও কর্মীদের সাথে অসাদাআচরণ মাঠ পর্যায়ের এনজিও অফিসে হামলা, লুটপাট করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে তাদের উপর।

গত ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে থাইংখালী রোহিঙ্গা শিবিরে গুলি করে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা দলনেতা মোহাম্মদ ইউসুফ মাঝিকে (৪৬)।

২০১৮ সালের জুনে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান নেতা-যাকে প্রধান মাঝি বলা হয়- ৪২ বছর বয়স্ক আরিফউল্লাহকে রাত ৮টা নাগাদ গলাকেটে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে ৩ বিদেশি সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় রোহিঙ্গা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এতে ১১ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়।

হামলায় আহতরা হলেন জার্মান সংবাদিক ইয়োচো লিওলি (৪৪), এস্ট্যাটিউ এপল (৪৯) ও গ্রান্ডস স্ট্যাফু (৬১), তাদের বাংলাদেশী দোভাষী মো. শিহাবউদ্দিন (৪১), গাড়িচালক নবীউল আলম (৩০) ও পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন (৩৩)।

জার্মান সাংবাদিকরা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন থেকে সংবাদ সংগ্রহ শেষে ফেরার পথে লম্বাশিয়ায় বাজারে এক রোহিঙ্গা পরিবারকে জামা-কাপড় কিনে দিচ্ছিলেন। কিন্তু ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ‘শিশুদের কৌশলে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’ ভেবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।

গত মাসে ক্যাম্প-২০ এ রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্প-ইন-ইনচার্জকে অবরুদ্ধ করে রাখে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীরা। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল থেকে ক্যাম্প-ইন-চার্জকে উদ্ধার করে।

এ ছাড়া লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবু তালেব চেয়ারম্যান (রোহিঙ্গা দল নেতা)কে গুলি করে হত্যা। নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘাত হামলা, মামলা, অপহরণসহ নানা অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। নিজের মধ্যে সহিংসতায় এ পর্যপ্ত মারা গেছে শতাধিক রোহিঙ্গা, আহত হয়েছে সহস্রাধিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা মাঝি বলেন রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্র পাল্টে যায় অনেকে মুখোশ পরিবর্তন করে ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। কথিত আছে অনেক রোহিঙ্গাদের রয়েছে অস্ত্র গুলাবারুদ।

গত বছর টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনসার কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা অস্ত্র লুট হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের হিস্রতা ও অস্ত্র থাকার বিষয়টি অনেকটা পরিস্কার হয়। পরে তাদেরকে ঘুমধুমের গহিন অরণ্য থেকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এভাবেই চলতে থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে থাকলে তা ছড়িয়ে পড়বে কক্সবাজার জেলার সর্বস্তরে। এর দায়ভার বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। কক্সবাজার জেলার স্থানীয়রা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও দায়িত্বশীল হবার অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন