রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকায় নিয়মিত ফোর জি নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না স্থানীয়রা
অনেকেরই প্রশ্ন, তারা কী কারণে ফোর জি নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত? কেন তারা রোহিঙ্গাদের জন্য এরকম বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো কেন রোহিঙ্গা ইস্যুর দোহাই দিয়ে দৈনিক ঘন্টার পর ঘন্টা ফোর জি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখবে?
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়ে আসছে স্থানীয় জনসাধারণ। ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা জনজীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দৈনন্দিন। বর্তমানে বেড়েই চলছে বিভিন্ন সমস্যা কিন্তু এসব এড়ানোর কোনো পথ খোলা নেই তাদের।
জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ইংরেজি তারিখ থেকেই বিকেল ৫ টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস ধরেই এখনও ফোর জি/এলটিই নেটওয়ার্কহীনতায় ভুগছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আওতাধীন স্থানীয় এলাকাবাসী। টানা প্রায় ১২-১৩ ঘন্টা ফোর জি নেটওয়ার্ক সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তারা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করেছে।
বিশেষ করে তরুণ সমাজ এবং অনলাইনে যুক্ত সিটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও তুমুল সমালোচনা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অনেকেরই প্রশ্ন, তারা কী কারণে ফোর জি নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত? কেন তারা রোহিঙ্গাদের জন্য এরকম বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো কেন রোহিঙ্গা ইস্যুর দোহাই দিয়ে দৈনিক ঘন্টার পর ঘন্টা ফোর জি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখবে? ফোর জি-এর মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারী ও অনলাইন কর্মক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগে রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
তবে এই নিয়ে বহুবার মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাহায্য কেন্দ্রে অভিযোগ করা হলে তারা বারবার জানিয়েছেন, বিটিআরসি কর্তৃক রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর আশেপাশের এলাকায় সমসাময়িক ফোর জি নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয়।
এই ভোগান্তির শিকার হওয়া রায়হান উদ্দিন বলেন,”আমার বাড়ি ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকায়। যদিও পড়ালেখার সুবাদে কক্সবাজার সদরেই বেশিরভাগ সময় থাকা হয়। মাঝেমধ্যে বিরতি পেলে পরিবারের টানে গ্রামে ছুটে এলে বারংবারই আমাকে ফোর জি নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভুগতে হয়। বিকেল ৫ টার পরে ফোর জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। শহরে থেকে ফোর জি নেটওয়ার্ক উপভোগ করতে পারি কিন্তু এখানে আসলে তা সম্ভব হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “এই আধুনিক বিশ্বের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা ফোর জি নেটওয়ার্ক না থাকাটা খুবই দুঃখজনক এবং আমি এর নিন্দা জানচ্ছি।”
একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মোজাম্মেল জানান, “সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যার পর দূরের কেউ আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযোগ করতে চাইলে ব্যর্থ হই এবং তা সম্ভব হয় না শক্তিশালী নেটওয়ার্ক না থাকায়। দিনের বেলায় তেমন সময় পাইনা ফোন ব্যবহার করার জন্য। যখনই সময় পায় তখন যথেষ্ট নেটওয়ার্ক পাইনা যা অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর।”
এই ঘন্টার পর ঘন্টা ফোর জি না-থাকার কারণ শুধুই কি রোহিঙ্গারা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন,”আমাদের মনে হয়না শুধু রোহিঙ্গাদের কারণেই ফোর জি এর মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থেকে আমরা বঞ্চিত। শুনেছি এটা নিয়ে চক্রান্ত চলছে।
ক্যাম্পের দোহাই দিয়ে অনেক লোক অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে এলাকায় এনজিওর কর্মকর্তা ও স্থানীয় মানুষদের অবস্থানের সুযোগ নিয়ে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ব্যবসা বাড়িয়ে এসব করছেন। এবং কয়েকটি চক্র এসবে জড়িত হয়ে বলে শুনা যাচ্ছে । এগুলা খুবই অন্যায় করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন,” ফোর জি নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়ার কারণ যদি রোহিঙ্গা হয়, তাহলে আমরা সেরকম মানবতা চাই না। রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের এলাকায় ফোর জি নেটওয়ার্ক পুণরায় চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।”
ক্যাম্পের আওতাধীন পালংখালী ইউনিয়নের উদ্যোক্তা টিটু এ বিষয়ে বলেন, “আমরা ইউনিয়নের দাপ্তরিক কাজে ব্রডব্যান্ডের মতো সরকারি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সাধারণ জনতারা কি করবে? এখন দেশ হয়ে পড়েছে প্রযুক্তি নির্ভর। এখনকার যুগে আমারা সকলেই বেশিরভাগ কাজ করে থাকি অনলাইনের মাধ্যমে। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেশের কোনো অঞ্চলের অধিবাসী দীর্ঘ সময় ধরে ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়াটা আসলে হতাশাজনক বিষয়। এবং নন-অফিসিয়ালি আমিও ব্যক্তিগতভাবে এটার শিকার হচ্ছি।”
এছাড়া এ বিষয়ে উল্লিখিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মোবাইল কোম্পানিগুলো যদি ক্যাম্প এলাকায় নিয়মিত ফোর জি না দেয় আমাদের কিছু করার নেই। গ্রাহকদের যদি তারা ফোর জি না দিয়ে থাকে তাহলে তাদেরকেই গ্রাহকরা হার মানাবে অন্য উপায়ে। ফোর জি নেটওয়ার্ক সচল রাখলে তো তাদেরই লাভ। তারাই যদি এরকম করে তাহলে সাধারণ জনগণের কি করার থাকতে পারে”।
ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন,”আমি নিজেই ফোর জি নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভুগছি। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা নাও পেতে পারি। তাই গ্রাহকদের তাদের নিজস্ব সিম কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে লিখিত দরখাস্ত করতে হবে।”