রোহিঙ্গা নির্মূল: মিয়ানমার সেনাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করাকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটি রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা স্বীকার করতে অং সান সু চির ওপর চাপ প্রয়োগ ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। রয়টার্সের খবর।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশেরও প্রশংসা করা হয়েছে।

এতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন চালানোর কথা নাকচ করে দিয়েছে। তারা যে মিথ্যা বলছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের নৃশংসতার সাক্ষ্য বহনকারী রাখাইনে তারা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে ঢুকতে দিচ্ছে না। এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও সেখানে যেতে পারছে না।

রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিকেরও মুক্তি দাবি করেন নিক্কি হ্যালি।

তিনি বলেন, আমরা তাদের অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। দুই সাংবাদিককে আটকে মিয়ানমারের যুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে গণমাধ্যমকে দোষারোপ করার প্রবণতা আছে।

গত সপ্তাহে রয়টার্স একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ইনদিন গ্রামের ১০ রোহিঙ্গাকে উগ্র বৌদ্ধ ও সেনাবাহিনী কীভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছিল, সেই বর্ণনা তুলে ধরা হয়।

জাতিসংঘে ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্কোইস ডেলাটরে বলেন, রয়টার্সের খবরে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার যে খবর দেখেছি, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ।

মিয়ানমার জাতিগত নির্মূল অভিযানের কথা অস্বীকার করেছে।

চীন ও রাশিয়ার ভেটোতে মিয়ানমারকে চাপে রাখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ভেটো ক্ষমতার ওই দুই বিশ্ব শক্তি জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত ডিমিত্রি পলিয়ান্সকি বলেন, বিভিন্ন তকমা ব্যবহার করে, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ও গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন ছেপে কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত কিংবা নিন্দা জানিয়ে কেবল সমাধানের রাস্তার দূরত্ব বাড়ানো যাবে। এতে কোনো সুরাহা আসবে না।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হুয়া দো বলেন, কিছু কূটনীতিক রাখাইন রাজ্য ভ্রমণে গিয়েছিলেন। কিন্তু কুয়েতি রাষ্ট্রদূত মানসুর আইয়াদ আল ওতাইবি বলেন, চলতি মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেখানে যেতে পারেনি। কারণ এটি সঠিক সময় ছিল না।

হুয়া দো বলেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর এক তদন্তে ইনদিন গ্রামে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির ১০ সদস্যকে আটক করে তাদের হত্যা ও কবর দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ কর্মকর্তা ও গ্রামবাসীসহ ১৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জবাবদিহিতার জন্য এ তদ্ন্ত খুবই ইতিবাচক।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের প্রতিটি নাগরিক দেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য। রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও কাজাখস্তান রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছে।

সাড়ে ৩ ঘণ্টার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও বলিভিয়াসহ ১২ দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন কুয়েতের রাষ্ট্রদূত শেখ সাবাহ খালিদ আল হামাদ।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন