রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাখাইনে কট্টর বৌদ্ধদের বিক্ষোভ

ডেস্ক রিপোর্ট:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয় প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সে দেশের সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে গত রোববার (২২ অক্টোবর) বিক্ষোভ করেছে দেশটির কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা। রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তুইয়ে আয়োজিত এই বিক্ষোভে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শত শত উগ্রপন্থী অংশ নেয়।

২০১২ সালের সহিংসতার সময় এই সিত্তুই থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তার আগ পর্যন্ত এই শহরটি ছিল রোহিঙ্গা অধ্যূষিত।

গত ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান শুরু করলে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

বিক্ষোভ আয়োজকদের একজন অং হুতাই এপি’কে বলেন, “মিয়ানমারের যে কোনও নাগরিককে তারা রাখাইনে স্বাগত জানাবেন। তবে নাগরিক হওয়ার অধিকার যাদের নেই, তাদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।”

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে আসা বাঙ্গালী অভিবাসী বলে অভিহিত করে। দেশটির ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠী থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে অং সান সু চি বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘মানুষের’ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি।’

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকার একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে সম্মত হয়েছে। তবে বৌদ্ধ উগ্রবাদীরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেওয়া সু চির পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করতে দেবেন না।

এদিকে, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার নব্বই দশকের যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তাতে একটুও ভরসা দেখছেন না শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। অতীতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারের মতো আসা এমন রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলেই অতীত স্মৃতিতে ‘বিভীষিকার চিহ্ন’ দেখছেন। যে চুক্তির ভিত্তিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলছে, তাতে যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ প্রমাণপত্র হাজিরের শর্ত আছে। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ফেলে স্রেফ জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন: বৈধ-অবৈধ পরের প্রশ্ন; কাগজপত্র কোথায় পাবে তারা?

কেবল রোহিঙ্গা নয়, এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিতে নিজেদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়ঙ্কর মানবাধিকার হরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে জোর করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানো উচিৎ হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সূত্র: এসএএম

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন