লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে চার জন আটক

ডেস্ক নিউজ: লন্ডনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে এক সেনাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার ব্যক্তিকে আটক করেছে।

এই ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লন্ডনের এক বাড়িতে হানা দিয়ে চারজনকে আটক করে। গোয়েন্দারা ইংল্যান্ডের লিংকন শহরের একটি ঠিকানাতে তল্লাশি চালিয়েছে।

এদিকে গতকাল যে দুই সন্দেহভাজন এই ঘটনায় জড়িত ছিল, বিবিসি তাদের একজনের পরিচয় জানতে পেরেছে। মাইকেল আদেবোলাজো নামের এই ব্যক্তি ২০০১ সালে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেন।

লন্ডনের উলউইচ এলাকায় একটি সামরিক ঘাঁটির বাইরে বুধবার বিকেলে এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।

এক সৈনিককে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যার পর সন্দেহভাজন হামলাকারীদের একজন একটি মাংস কাটার ছুরি হাতে নিয়ে পথচারীদের ক্যামেরার সামনে কথা বলেন। এই ব্যক্তি বলেন, ব্রিটিশ সৈন্যরা যেহেতু প্রতিদিন মুসলিমদের হত্যা করছে, তাই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন।

নিন্দার ঝড়

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য কোন ভাবেই সন্ত্রাসের কাছে নতি স্বীকার করবে না।

তিনি বলেন, ইসলামের নামে যারা এই হামলা চালিয়েছে তারা আসলে ইসলামের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারাও এ ঘটনার কঠোর নিন্দা করেছেন। রামাদান ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ শফিক বলছেন, ইসলামে এর কোন স্থান নেই।

“এটা একটি বর্বর ঘটনা যার কোন যৌক্তিকতা নেই। এদেশের এবং অন্যান্য দেশের মুসলিম হিসেবে আমরা এর প্রতি ঘৃণা জানাই। ইরাক বা আফগানিস্তানে যা হচ্ছে – তার জবাবে ব্রিটিশ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করাটা বৈধ – এমন ধারণা ইসলামের শিক্ষার বিরোধী। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, এদের বাপারে কেউ কিছু জানলে তা পুলিশকে জানাবার জন্য। কিন্তু, এটাও বলতে হবে যে এঘটনার পর নিরপরাধ মুসলিমদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। কেন্ট এবং এসেক্সে মসজিদে হামলা হয়েছে, এতে আমরা উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসীরা আমাদের বিভক্ত করতে চায় – তাদের সফল হতে দেয়া যাবে না।”

পুলিশ ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করেছে, কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। বুধবার রাতেই উলউইচের সামরিক ব্যরাকের কাছাকাছি ইংলিশ ডিফেন্স লিগ নামে একটি চরম ডানপন্থী সংগঠন বিক্ষোভ করে।

তবে সাবেক ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জন রিড বলছেন, এই ঘটনা যেন ব্রিটিশ সমাজকে বিভক্ত করতে না পারে তা দেখতে গবে।

“এটা যদি একটা সন্ত্রাসী হামলা হয়ে থাকে, তাহলে হত্যার পাশাপাশি এদেশের মানুষকে ভয় দেখানোটাও একটা উদ্দেশ্য ছিল, যাতে ওরা যা বলছে ব্রিটেন তাই করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এভাবে আমরা কোন কিছু করি না, গণতান্ত্রিক পন্থায় করি। তাই সবাইকে বুঝতে হবে যে, বিভক্তিটা মুসলিম আর অ-মুসলিমদের মধ্যে নয়। আসলে বিভক্তিটা হচ্ছে সন্ত্রাসী এবং বাকি সবার মধ্যে।”

পুলিশ এখন এই দুজন সন্দেহভাজন আক্রমণকারীর পরিচয় বের করার চেষ্টা করছে। তারা এখনো এটা বের করতে পারে নি যে তারা কি একা একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নাকি এটি কোন বড় আকারের ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।

অতীতেও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণের কয়েকবার চেষ্টা হয়েছে। যদি এটা বড় কোন পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকে তা হলে তা হবে সন্ত্রাস দমন বিভাগ এবং এমআই ফাইভের জন্য একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন