লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় চরম বিপর্যয়

লামা প্রতিনিধি:

লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। গত এক মাস যাবত বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে। সড়কের পাশে অপরিকল্পিত বনায়ন, নিম্নমানের খুঁটি স্থাপন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে উপজেলা সমূহের বিদ্যুৎ সরবরাহে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঘূর্ণিঝড় মোরায় সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তেত্রিশ হাজার কেভি এবং এগারো হাজার ভোল্টেজের শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ঘূর্ণিঝড় মোরায় ভেঙে গেছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। উপজেলা সদর সমূহে জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও তা দিনের দুই এক ঘন্টার বেশি থাকে না। বর্তমানে উপজেলাসমূহের দুই শতাধিক গ্রাম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পতিত। কবে নাগাদ উপজেলা সমূহের সর্বত্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে তা জানাতে পারছে না পিডিবি।

স্থানীয়রা জানায়, তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য লামা-আলীকদম-চকরিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির সড়কের দুইধারে বিএটিবি তামাক কোম্পানিগুলো অপরিকল্পিতভাবে রেইন ট্রি গাছ রোপণ করেছে। যা খুব দ্রুত বেড়ে উঠে এবং ডাল-পালা ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য ঝড়ো হাওয়ায় এসকল গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে গিয়ে ও উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার সামান্য বাতাসেই গাছ ভেঙ্গে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙ্গে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা।

তাছাড়া সড়কের দুপাশের গাছ-পালার ডাল নিয়মিত না কাটায় সামান্য বাতাসেই বিদ্যুৎ বিপর্যস্ত হয়। আলীকদম উপজেলা চেয়্যারম্যান মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, আলীকদমের বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারের কোন ধরণের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পিডিবি মানুষ মনে করে না বলে মনে হয়। একটি এনজিওর লামা উপজেলা ব্যবস্থাপক মেহেরুন্নেছা মেরি জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার কারণে ল্যাপটপের চার্জ থাকে না। সে কারণে নিয়মিত অফিস রিপোর্ট পাঠাতে পারি না।

গৃহিণী তাসলিমা আক্তার জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অবব্যস্থাপনার কারণে-টিভি, ফ্রিজ, আইপিএস, মোবাইলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সামগ্রীগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। লামা উপজেলা পরিষদ সদস্য জটিলা রানি শীল বলেছেন, স্থানীয় মেম্বার সাগর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিকট থেকে মিটার প্রতি একশত টাকা নিয়েছেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ ঠিক করা হচ্ছে না।

অপর গৃহিণী রোকেয়া বেগম জানিয়েছেন, লো ভোল্টেজের কারণে বৈদ্যুতিক সামগ্রীগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মোটর দিয়ে পানি উঠানো যায় না। ফ্যান ব্যবহার করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই লামার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। লামা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় জানানো হয় যে, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় অনিয়মের কারণে অফিস-আদালতের কাজকর্ম ঠিকমতো করা যায় না। অফিসিয়াল রিপোর্ট কম্পিউটার ও ল্যাপটপ হওয়ায় বিভাগীয় কার্যক্রমের রিপোর্ট প্রস্তুত ও প্রেরণ করা যায় না।

লামা ও আলীকদমের বিদ্যুৎ চকরিয়া থেকে এবং নাইক্ষ্যংছড়ির বিদ্যুতের তেত্রিশ হাজার ভোল্টেজের লাইন কক্সবাজার থেকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। তেত্রিশ হাজার ভোল্টেজের লাইনসমূহের ব্যবহৃত তার ও খুঁটি খুবই নিম্নমানের বলে জানা গেছে।  আবার লামা আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিদ্যুৎ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ কক্সবাজার থেকে করা হয়। যে কারণে এ উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংশ্লিষ্টগণ খাম-খেয়ালিপনার আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লোডশেডিং এ কোন ধরণের নিয়ম-নীতি মানা হয় না। বিদ্যুৎ কখন যাবে আর কখন আসবে গ্রাহকগণ সে বিষয়ে অবগত নন।

লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ অলিউল ইসলাম বলেছেন, লামায় আমি নতুন যোগদান করেছি। মোরায় বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তারপরও বিপর্যয় থেকে কেটে উঠার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, লামা আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা বান্দরবান জেলার অধীনে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন