লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ

লামা প্রতিনিধি:

উপজেলার লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করার জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন খাতের ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন একই বিদ্যালয়ে কর্মরত ৬ জন শিক্ষক।

অভিযোগকারী শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিথী তঞ্চঙ্গ্যা’কে অভিযুক্ত করে দুদক ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছে। শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহার করার জন্য বরাদ্দকৃত উপকরণ ক্রয় না করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিযোগকারী শিক্ষকগণ।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর’১৮) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিথী তঞ্চঙ্গ্যাকে বদলী করার এক আদেশ বিদ্যালয়ে পৌঁছলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণের টাকার আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জোরদার হতে থাকে।

কর্মরত শিক্ষকগণ জানিয়েছেন, শিক্ষা উপকরণের টাকা তিনি ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছে। বিদ্যালয়ের কোন ধরণের শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করেনি। বিথী তঞ্চঙ্গ্যা’কে রাঙ্গামাটি জেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে বদলী করা হয়েছে।

লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬শ ১৮ জন ছাত্র ছাত্রী লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ২৭টি পদের বিপরীতে ১৮টি পদ শূণ্য রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৯জন শিক্ষক কর্মনত আছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। গণিত ও ইংরেজিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে।

বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক মো: মোজ্জাম্মেল হোসেন, সৈয়দ মোঃ আব্দুল মান্নান, নুরুল ইসলাম ফরিদ, নুরুল আবছার সঞ্জয় বড়ুয়া ও আব্দুস শুক্কুর দুদক সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অর্থ ব্যয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মালামাল ক্রয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও অন্য দুজন শিক্ষক নিয়ে কমিটি করার বিধান থাকলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিথী তঞ্চঙ্গ্যা অত্র নিয়ম অনুসরণ করেনি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালু রাখা নিমিত্তে গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন খাতের অধিকাংশ টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একজন অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারীর যোগসাজশে বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ, ল্যাব যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জাম, কম্পিউটার সামগ্রী, রাসায়নিক দ্রবাদি, খেলার সামগ্রী, বই পত্র ও সাময়ীকি, ভ্রমণ বিল, ইন্টারনেট সংযোগ বিল সহ আনুসাংগিক খাতের ৪লক্ষ ২০ হাজার টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করার অভিযোগ এনেছেন সহকারী শিক্ষকগণ। আবার বিদ্যালয়ের সোনালি ব্যাংক লামা শাখার ১৬টি ব্যাংক হিসাব হতে ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ও আনা হয়েছে।

শিক্ষকগণ আরও জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিলের টাকা আত্মসাতের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ মেরামতের নামে ৩০ হাজার টাকা বিদ্যালয় তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিথী তঞ্চঙ্গ্যা একজন পিওনকে দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে এ টাকা সমন্বয় করেছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তফা জামাল জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বিথী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ক্রয় কমিটিতে না রাখায় শিক্ষকগণ এই অভিযোগ তুলেছে।

ক্রয় কমিটিতে থাকা সদস্য লামা আর্দশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.এম ইমতিয়াছ এবং লামা ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তৈয়ব জানান, শিক্ষা উপকরণ সহ কোন উপকরণ ক্রয়ের বিষয়ে আমাদের জানা নাই। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি জানান, যেখানে বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক একযোগে অভিযোগ তুলেছেন, সেখানে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন