শীতের শুরুতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ, আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ঘরে ঘরে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তারা ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে।

শীতের শুরুতেই সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বরে। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রবণতা দেখা দেয় বেশি, আর ঝুঁকিও রয়েছে তাদের। কোনো কোনো শিশু আবার আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। মৌসুমি এসব রোগ শিশু আর বৃদ্ধদের বেশি হলেও এতে আক্রান্ত রোগী ও অভিভাবকদের কোনো রকম আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে এবং অভিভাবক ও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে জ্বর, হাপানী, ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ দিন বয়সের শিশু থেকে শুরু করে প্রায় বৃদ্ধাসহ শত শত রোগী চিকিৎসারত রয়েছেন।

কর্তব্যরত নার্স জানান, শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন নিউমোনিয়া, জ্বর, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫-৩০ জন করে শুধু শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

জানা গেছে, ঠাণ্ডাজনিত ও বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার কারণে বিভিন্ন রোগীদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলা ও শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি করানো হচ্ছে। জেলার নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীরা বেশি টাকা খরচ করতে না পারায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

রবিবার(২৮অক্টোবর)  বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সিটের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী বৃদ্ধি রয়েছে।

রোগীদের সিট দিতে না পারায় একটি সিটে ২জন করে রোগী রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে শিশু ওয়ার্ডে ৭২ জন শিশুই ছিল ঠাণ্ডা ও নিউমোনিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত। আর সিটের অতিরিক্ত ৩২ জন ভর্তি ছিল। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে, নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সচেতনতা ও সাধারণভাবে চিকিৎসা দিতে না পারার ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করায় বেশি।

চিকিৎসা নিতে পার্শ্ববর্তী শহরের বৈদ্যঘোনা থেকে আসা শিশু আকতারের মা সেলিনা আক্তার জানান, তার সন্তানের বয়স দেড় বছর। গত কয়েকদিন ধরে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে অতিরিক্ত নিউমোনিয়া জনিত রোগের কারণে। শুরুর দিকে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইবার চট্টগ্রামে রেফার করেন। কিন্তু নেওয়ার আগেই রাত ৯টায় শিশুটি মারা যায়।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জাগো নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি ও দৈনিক দৈনন্দিন এর বার্তা প্রধান সাঈদ আলমগীরের ৪০ দিনের শিশু কন্যা উম্মে আয়মন তাহিয়ার অকাল মৃত্যু হয়।

কক্সবাজারের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল করিম খাঁন জানান, ঠাণ্ডার কারণে অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে। শীতের কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ও চামড়ার রোগও বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া হয় রোটা ভাইরাসের কারণে। মায়ের দুধ শিশুর পুষ্টি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে সর্দি-কাশি শিশুকে সহজে আক্রান্ত করতে পারে না এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

তিনি আরও বলেন, শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ পান করে, তখন শিশুকে পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই। কারণ মায়ের দুধে ৮৯ শতাংশ পানি থাকে। আর ১১ শতাংশ থাকে সলিড খাবার। শিশুকে সময়মতো সব টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়া হলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে শিশুকে অনেকটাই নিরাপদ রাখা সম্ভব।

তাই শীত শুরুর এ অবস্থায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ এবং শিশুদের সব সময় যত্নসহকারে লালন পালন করে ঢেকে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী জানান, শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও নবজাতকরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তবে শিশুদের বেলায় ৩টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে-যদি কোনো শিশুর সর্দি-জ্বরের সঙ্গে কাশি, বুকে ঘ্যাড় ঘ্যাড় শব্দ হয় আর যদি শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে অবশ্যই ওই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ঠান্ডা জ্বরের সঙ্গে বুকে ঘ্যাড় ঘ্যাড় ও শ্বাসকষ্ট হওয়াটা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। ভাইরাল ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন শিশুসহ অনেক রোগী ভর্তি হয়ে নিচ্ছেন আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন