সন্ত্রাস দমনে মহেশখালীতে পুলিশের কঠোর অবস্থান
মহেশখালী প্রতিনিধি:
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও দখলবাজী বন্ধ করতে মহেশখালীর পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা উচ্ছেদে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গেল দুই দিনে অন্তত ৭টি আস্তানা উচ্ছেদ করেছে। এতে অংশ নিয়েছে মহেশখালী থানার ওসি’র নেতৃত্বে ৫৫জন পুলিশ সদস্য। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও দখলবাজী বন্ধ করে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহেশখালীর পাহাড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। দুই দিনের অভিযানে কেউ গ্রেফতার না হলেও অন্তত সন্ত্রাসীদের ৭টি আস্তানা উচ্ছেদ করেছে পুলিশ। ১৬ জানুয়ারি (বুধবার) থেকে এ অভিযান শুরু হয়।
হোয়ানকের একজন সাবেক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অন্তত ৫৫জন পুলিশ সদস্য ১৬ জানুয়ারি বর্তমানে উত্তপ্ত কালাগাজীর পাড়া পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। বর্তমানে মহেশখালী থানার এসআই জহির এর নেতৃত্বে কালাগাজীর পাড়া বাজারে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প কাজ করলেও সম্প্রতি দুইটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় এ এলাকায়। এ এলাকায় দুইটি সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় থাকায় হামলা ও পাল্টা হামলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তৎমধ্যে একটি এসআই পরেশ কারবারি হত্যার আসামিরা পুলিশের ভয়ে পাহাড়ে আস্তানা গড়ে তুলেছে। ওই আস্তানা থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক যুবককে জবাই করে হত্যা করেছে। এর আগে প্রতিপক্ষ লোকজনের হামলায় তাদের এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের আস্তানা থেকে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী করে আসছিল। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়িরা। পুলিশ পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে ৪টি আস্তানা ধ্বংস করে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) কালারমারছড়ার আধাঁরঘোনা, নোনাছড়ি ও মোহাম্মদ শাহ ঘোনার ৩টি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে ৭জন উপ-পরিদর্শকসহ অন্তত ৫৫জন পুলিশ সদস্য এ অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
নোনাছড়ি গ্রামের শামসুল আলম জানিয়েছেন, এই তিন গ্রামের পশ্চিমাংশের অধিকাংশ লবণ জমি এখন দখলবাজদের নিয়ন্ত্রণে। পাহাড়ি আস্তানা থেকেই সন্ত্রাসিরা এ সব দখলবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। যার পেশী শক্তি যত বেশী তার দখলে জমিও ততবেশী। জমির প্রকৃত মালিকরা সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায়। কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবরে অনেকে অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাচ্ছে না জমির মালিকরা। এক সন্ত্রাসী এলাকা ছাড়া হলে অন্য সন্ত্রাসী পুনরায় দখল করে নিচ্ছে। নিত্য নতুন গডফাদারের কারণে অসহায় লবণ চাষীরা। বিগত চিংড়ি মৌসুমেও সন্ত্রাসীরা অধিকাংশ চিংড়ি প্রজেক্ট দখলে রেখে ছিল। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে সাধারণ মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে। পুলিশের অভিযান শেষ হলে অজ্ঞাত স্থান থেকে বেরিয়ে আসে সন্ত্রাসীরা।
বুধবার আধাঁরঘনা, নোনাছড়ি ও মোহাম্মদ শাহ ঘোনার বিভিন্ন আস্তানায় ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। এতে ৩টি আস্তানা উচ্ছেদ করে পুলিশ।
মোহাম্মদ শাহঘোনার মোহাম্মদ জাকের হোছাইন জানিয়েছেন, এ এলাকার পশ্চিম পাশের অন্তত ৩০০ একর জমি জবর দখল হয়েছে। জমির মালিকরা এখন সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। কেউ অভিযোগ করলে মুচলেকা দিয়ে এলাকায় আসতে হয়। অনেক জমির মালিক এখন সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিভিন্ন এলাকায়। জমি ফিরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু জমি ফিরে পায়নি। তাই সন্ত্রাস মুক্ত হলে জমির মালিকরা জমি ফিরে পাবে।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি পদক প্রাপ্ত কালারমারছড়ার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এস আই শাওন দাশ জানিয়েছেন, কোন সন্ত্রাসীই ছাড় পাবে না অভিযান চলবে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, অভিযান আরো জোরদার হবে। যেভাবেই হোক মহেশখালীকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে চাই। সন্ত্রাসীদের কয়েকটি আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সবকটি আস্তানাই চিহ্নিত করা হয়েছে।