সাজেককে ভারতের দার্জিলিং’এ পরিণত করা হবে- মেজর জেনারেল সাব্বির আহম্মেদ
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
পার্বত্যাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সাজেককে ভারতের পর্যটন এলাকা দার্জিলিং এর মতো দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় করে গড়ে তুলতে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিকদলসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করলেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহম্মেদ এনডিসি, পিএসসি। সোমবার রাঙামাটির বাঘাইহাটে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই সহযোগিতা কামনা করেন।
নয়নাভিরাম দৃশ্য নিজ চোখে দেখেই প্রধানমন্ত্রী দুর্গম এই সাজেকে দার্জিলিং এর মতো করে পর্যটন স্পট গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। তার আলোকে এ এলাকাকে পর্যটন এলাকায় রূপান্তিত করার কাজে সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী। আর এক্ষেত্রে এখানকার বসবাসরত সাধারণ মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করেন জিওসি। তিনি বলেন, সাজেকের উঁচু পাহাড়ের রুইলুই পাড়ায় পানির ব্যবস্থা করতে ৭০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায় রাস্তা আলোকিত করতে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে সেখানের বাসিন্দাদের সামাজিক এবং ধর্মীয় এবং বিনোদনের জন্য মাঠসহ একটি ক্লাব করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় হস্তশিল্পগুলোকে চালু করা হবে। আর তা মান সম্মত করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সাজেক-বাঘাইছড়ির দীর্ঘ সড়ক পথে বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, ঝড়ে পরা শিশুদের জন্য পাঠশালা প্রোগ্রামও থাকবে। সর্বোপরি রুইলুই পাড়াকে একটি মডেল পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সৃষ্টি করা হবে। এর বেশকিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে।
সমাবেশে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, এই দুর্গম সাজেকে যদি পর্যটনের বিকাশ ঘটে তাহলে এখানেতো আপনারাই ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। এখানে হোটেল-মোটেল, রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সকল ব্যবসা বাণিজ্য আপনারাই চালাবেন। এখানে সৃষ্ট কর্মসংস্থানে আপনাদের শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা চাকুরি করবে। আপনারা নিজেদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারবেন সারাদেশ তথা বর্হিবিশ্বের কাছে। সারাদেশের সাথে অত্র এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ বাড়বে, উন্নয়ন ঘটবে তাদের জীবনমানের।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্যাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে আসেনি। এখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের পরিবর্তন ঘটিয়ে উন্নয়নের ধারায় সমানভাবে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্যই বাংলাদেশ সরকারের আদেশের ভিত্তিতেই পার্বত্যাঞ্চলে কাজ করছে সেনাবাহিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে জিওসি বলেন, দেশের সমতল ভূমির মতো আমাদের পার্বত্য এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে সচেতন করে গড়ে তুলে এখানেও সমানভাবে জীবনমানের সার্বিক উন্নতি সাধিত হওয়া পর্যন্তই কেবল সেনাবাহিনী পার্বত্যাঞ্চলে কাজ করবে। পার্বত্যাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী কিছুই নিয়ে যায়নি অথবা নিয়ে যাবেও না উল্লেখ করে জিওসি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্যই কাজ করছে সেনাবাহিনী। এখানকার মানুষের জীবনমানে উন্নয়ন ঘটলে এখানে হানাহানি-সংঘাত অনেকটাই কমে যাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত পাহাড়ি নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা তাদের ব্যাক্তিগত মতামতও তুলে ধরেন প্রধান অতিথির কাছে। প্রধান অতিথি ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি স্থানীয় পাহাড়ি প্রান্তিক মানুষের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের কথা শুনেন এবং এসব ব্যপারে অতিশীঘ্রই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
এলাকার বিরাজমান পরিস্থিতি প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সেনা বাহিনী আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী সামছুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল ফরিদ আহমেদ, দীঘিনালা জোন কমান্ডার লে,কর্ণেল লোকমান আলী, বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে,কর্ণেল কবীর হোসেন, মারিস্যা জোন কমান্ডার লে,কর্ণেল রবিউল ইসলাম, ইসিবি’র সিও লে. কর্নেল জামিউল, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর রুবাইয়াত হাসান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন চৌধুরী, বাঘাইছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দীন, সাজেক এলাকার হেডম্যান লাল থাংগা লুসাই এবং ইউপি সদস্য বিনয় চাকমা প্রমূখ।
হেডম্যান তার বক্তব্যে সাজেকের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রধান অতিথিকে অনুরোধ জানান। এছাড়াও স্থানীয়রা তাদের বক্তব্যে বলেন, আঞ্চলিক ৩টি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে চিন্তা ভাবনা করে কাজ করা দরকার। এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় স্বশস্ত্র দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন স্থানীয়রা।
এদিকে সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মাচালংয়ে নবগঠিত সাজেক থানা ও নেতা-কর্মীদের নামে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে জুম্ম ‘উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র’ বন্ধের দাবিতে সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর সাজেক শাখার নেতা-কর্মীরা সাজেকের উজোবাজার (গঙ্গারাম) বাজারে অবস্থান সমাবেশ করে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদেরকে সমাবেশে যোগদানের ব্যাপারে অনুরোধ করলে স্থানীয় পাহাড়ি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে স্থানীয় চারটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশ শেষ করে জিওসি’র মতবিনিময় সভায় যোগ দেয় বলে জানাগেছে।