সাভারে ভয়াবহ ভবন ধ্বস: ৮৫ জনের লাশ উদ্ধার

23868_10200499268238056_1238320160_n

 ডেস্ক নিউজ

সাভারে ৮ তলা বিশিষ্ট ‘রানা প্লাজা’ ধ্বংসস্তুপ থেকে দুপুর একটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৮৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অগনিত লাশ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা একশ ছাগিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে৤ আটকে পড়াদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বলে ধারনা উদ্ধারকর্মীদের।

সাভারে এনাম মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান দুপুর ১টা ১০ মিনিটে সাংবাদিকদে হাসপাতালের মর্গে ৪৫টি লাশ থাকার কথা জানালেও সাভারে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিবির ঢাকা জেলার পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপতালসহ সাভারের বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও থানায় মোট ৮৫টি লাশ পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেও ভবন মালিককে গ্রেফতার করা হয়নি৤ আটকে পড়া উল্টো ভবন মালিক স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে এমপি তৌহিদ মুরাদ জং জনতার রুদ্ররোষ থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন বলে জানা গেছে৤

আহত অবস্থায় প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সেনা বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সাধারণ মানুষ উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবহিনীর ৪টি ইউনিট সকাল নয়টা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করে৤আহতদের চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি৤

বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজা নামের ৮ তলা ভবনটি বিকট শব্দে ধসে পড়ার পর পরই স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় জড়ো হওয়ায় ঢাকা-আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
 
উদ্ধার হওয়া শ্রমিক সামিউল আলম জানান, রানা প্লাজায় ৩ থেকে ৮তলা পর্যন্ত মোট ৫টি গার্মেন্টস রয়েছে। এই কারখানাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে বলে তিনি জানান।তবে মঙ্গলবার ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে পুরো ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ।ভবনটির মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক মো. সোহেল রানা। ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর তিনি মঙ্গলবার সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, এতে কোন সমস্যা হবে না, সামান্য একটু প্লাস্টার খসে পড়েছে মাত্র।মঙ্গলবার এই ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ভবনটি  ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ভবনটির নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বুধবার সকালে শ্রমিকদের জোর করে ভবনে কাজে ঢুকতে বাধ্য করা হয় বলে জানিয়েছে শ্রমিকরা৤

সাভার থানা পুলিশ জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে মূল খুঁটি ও সামনের দেয়ালের অংশবিশেষ ছাড়া পুরো কাঠামোটিই ভেঙে পড়েছে। এ সময় আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী, জানান,  আমি দোকানে বসেছিলাম।  হঠাৎ বিকট শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ধুলার ঝড়ের মতো উঠল।  আর চোখের পলকে ভবনটি ধসে পড়ল।

ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল। আর তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ তলার প্যান্টম এ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার প্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেঙটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন বলে স্থানীয়রা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন