সীমান্ত নিরাপত্তায় বান্দরবানে চলছে সড়কপথ নির্মাণ, সোলার লাইট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন

সম্প্রতি মিয়ানমার সংলগ্ন বান্দরবানের সীমান্ত নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে রয়েছে সড়কপথ নির্মাণ, সোলার লাইট, ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন প্রভৃতি।

বর্তমানে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে চলছে সোলার লাইট লাগানোর কাজ। ইতোমধ্যে তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ার শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে লাগানো হয়েছে ৪টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। সেইসঙ্গে চলছে সড়ক নির্মাণের কাজও।

বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ৬৩ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে নাফ নদী এবং স্থল সীমান্তের পরিমাণ ২৭২ কিলোমিটার। আর বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি এবং রুমা উপজেলার সঙ্গে রয়েছে ১৭২ কিলোমিটার সীমান্ত।

দীর্ঘ এ সীমান্তে বিজিবির ভিওপি ক্যাম্প রয়েছে ৭৪টি। এর মধ্যে থানচি বলিপাড়া ব্যাটালিয়নের আওতায় ১৫টি, আলীকদমে ৭টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৪টি, রামুতে ৬টি, কক্সবাজারে ১০টি ও টেকনাফে ১২টি।

অপরদিকে বান্দরবান বিজিবির আওতায় রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি-ভারত সীমান্তে আছে ৮টি ভিওপি ক্যাম্প। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে বান্দরবানের চারটি উপজেলা সীমান্তে ওয়াকওয়ে বা সীমান্ত সড়কপথ তৈরি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে নিরাপত্তা বাড়াতে সীমান্ত পয়েন্টের পিলারে বসানো হচ্ছে সোলার লাইট। ইতোমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে ৪৫টি সোলার লাইট পোস্ট বসানো হয়েছে। আর নো-ম্যান্স-ল্যান্ডের কোনাপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পের আশপাশে বসানো হয়েছে ৪টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি ক্যামেরা)।

টেকনাফে ৩টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নাইট ভিশন ক্যামেরা, অত্যাধুনিক সার্চ লাইটসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

বিজিবি কক্সবাজার অঞ্চলের কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. খালিদ আহমেদ জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে বিজিবি বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারমধ্যে কোনাপাড়া সীমান্তে ৪টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রাথমিকভাবে ৪৫টি সোলার লাইট পোস্ট লাগানো হয়েছে।

তবে গুরুত্ব বিবেচনায় সংখ্যাটি আরও বাড়ানো হবে বলেও জানা গেছে। নিরাপত্তা বাড়াতে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে বিজিবি সীমান্ত সড়কপথ নির্মাণের কাজ করছে। বিজিবির একটি ভিওপি থেকে আরেকটি ভিওপি পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ওয়াকওয়ে সড়কপথ তৈরি হচ্ছে।

এ পদক্ষেপগুলোর কারণে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার হয়েছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আরও ভিওপি ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

রোহিঙ্গা দলনেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, কোনাপাড়া সীমান্তের আশপাশে সিসি ক্যামেরা এবং সোলার লাইট পোস্ট লাগানোর কারণে শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এখন শান্তিতে আছে। মিয়ানমারের সেনা-বিজিপি এবং মগের অত্যাচার শতভাগ কমে গেছে। রাতের বেলায় সোলার লাইটের আলোয় আলোকিত হয় আশ্রয় ক্যাম্পও।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তের কোনাপাড়া পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা এবং বিভিন্ন পয়েন্টে সোলার লাইট পোস্ট বসানোর কারণে সীমান্ত উত্তেজনা অনেকটা কমেছে।

শূন্য রেখায় রোহিঙ্গাদের ওপরও মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচার কমেছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমেছে। সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ নিরাপদে রয়েছে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে আরও সোলার লাইট পোস্ট এবং সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে।

সূত্র- যুগান্তর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন