সু চিকে ইউনিসনের দেওয়া সম্মাননা স্থগিত

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরও কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান সু চিকে দেওয়া সম্মাননার বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে।

সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা সু চিকে ২০০৫ সালে সম্মানসূচক সদস্যপদ দিয়েছিল ইউনিসন।

এ সংগঠনের সভাপতি মার্গারেট ম্যাককি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, “মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ইউনিসনে অং সান সুচির সম্মানসূচক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে তিনি সাড়া দেবেন।”

ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে থাকার দিনগুলোতে সু চিকে দেওয়া সম্মাননা তারা স্থগিত করার কথা ভাবছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মত ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন।

“আমরা ১৯৯৮ সালে অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল ডিগ্রি দিয়েছিলাম। তিনি সে সময় মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

“সেই বিবেচনায় এখনই তার সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ত সমীচীন হবে না। তবে আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্টস ইউনিয়নও এক সময় সু চিকে তাদের সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট পদ দিয়েছিল। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্মাননা তারা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে সু চির নিষ্ক্রিয়তা এবং তার বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে যে ইউনিয়ন একমত নয়, সেজন্যই এ প্রতীকী পদক্ষেপ।

গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া সু চি ২০১০ সালে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান।

গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩০ বছরে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি শহর ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০১৫ সালের নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তবে স্টেট কাউন্সেলর পদ সৃষ্টি করে কার্যত সু চির হাতেই সরকারপ্রধানের মূল ক্ষমতা রাখা হয়েছে।

গত মাসের শেষে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে শরণার্থীদের কথায়।

সেনাবাহিনীর মত সু চির দলও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হতে হচ্ছে সু চিকে।

১৯৬৭ সালে  অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউজ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন তখনকার তরুণ সু চি। তার স্বামী ড. মাইকেল অ্যারিস এক সময় ওই কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন।

সু চি গৃহবন্দি হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১২ সালে।

অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে মিয়ানমারের এই নেত্রীকে যে ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল, তা এখন প্রত্যাহার করার কথা ভাবছেন কাউন্সিলররা।

অক্সফোর্ড কাউন্সিলের সদস্য জন ট্যানার অক্সফোর্ড মেইলকে বলেছেন, “মিয়ানমারের পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তাহলে কাউন্সিলররা ওই সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”

সূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন