সেন্টমার্টিন সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ ফের বিজিবি মোতায়েন

নিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দ্বীপ সেন্টমার্টিন এলাকার নিরাপত্তায় ভারী অস্ত্রসহ ফের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত পাহারার অংশ হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তে এটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দফতর।

রবিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসীন রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মোহসীন রেজা বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে এর আগেও বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। তবে ১৯৯৭ সালের পর ওইভাবে আর পাহারা ছিল না। আবারও ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগের মতো আবারও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। তাই আজ থেকে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।’

সেন্টমার্টিনে বিজিবি মোতায়েন করার মতো কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে মোহসীন রেজা বলেন, ‘কোনো বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। সারাদেশের সীমান্ত যেভাবে পাহারা হয়ে থাকে, সেভাবেই সেন্টমার্টিনে বিজিবির সদস্যরা পাহারায় থাকবে। আর বিজিবি তো সব সময়ই অস্ত্র নিয়েই পাহারায় থাকে। এখানে ভারী অস্ত্র বলতে তেমন কিছু বোঝানো হয়নি।’

বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা সেন্টমার্টিন আবহাওয়া অফিসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

সেন্টমার্টিন থেকে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা আটক করেছে কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় দস্যুতার ঘটনাও ঘটে। এসব নিয়ন্ত্রণে টেকনাফ থানার একটি পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে সেন্টমার্টিনে। তবে বর্তমান সরকার মনে করছে, সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তায় বিজিবি মোতায়েন দরকার।

সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা বিজিবি সদস্যরা গত বছর অক্টোবরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সেন্টমার্টিনকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার। মিয়ানমার সরকারের জনসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইট সম্প্রতি তাদের দেশের যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে সেন্টমার্টিনকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ দেখানো হয়। ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও’কে তলব করে এর প্রতিবাদ জানায়। এরপর মিয়ানমার মানচিত্র থেকে সেটি পরিবর্তন করে।

কক্সবাজার সংলগ্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সৃষ্টি থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অন্তর্গত। ব্রিটিশ শাসনাধীন ১৯৩৭ সালে যখন বার্মা ও ভারত ভাগ হয় তখন সেন্টমার্টিন ভারতে পড়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সেন্টমার্টিন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত। ১৯৭৪ সালে সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের ধরে নিয়েই মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়।

এদিকে টেকনাফ ২নং বিজিবির অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহড়া চলছে। দ্বীপে বিওপি (বর্ডার আউটপোস্ট) ক্যাম্প স্থাপনের লক্ষ্যে রবিবার (৭ এপ্রিল) থেকে নিয়মিত মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। এতে কোনও ধরনের ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না।

সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিজিবি (তৎকালীন বিডিআর) ছিল। এরপর থেকে সেন্টমার্টিনে বিজিবির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতদিন ধরে কোস্টগার্ড সদস্যরা ওই সীমানা পাহারা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার সেন্টমার্টিনে বিজিবির একটি বিওপি ক্যাম্প স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। তাই সেখানে টহল দিচ্ছে বিজিবি। এটা নিয়মিত টহলের অংশ। প্রতিদিন বিজিবির সদস্যদের নিয়ে দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় মহড়া চলবে। তবে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে ভারি অস্ত্র মোতায়েনের যে খবর এসেছে তা সঠিক নয়। স্বাভাবিকভাবেই টহল দিচ্ছে বিজিবি। এ টহল বিওপি ক্যাম্প স্থাপন হওয়া পর্যন্ত চলবে।’

সেন্টমার্টিন ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব খাঁন বলেন, অনেকদিন পর বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। যার ফলে সীমান্তে টহল জোরদার, মাদক প্রতিরোধ ও মিয়ানমার ঘেঁষা সেন্টমার্টিন রক্ষায় অনেক ভূমিকা রাখা যাবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষার জন্য কোস্টগার্ডের পাশাপাশি বিজিবিও কাজ করবে। তাই বিজিবি সেন্টমার্টিনে টহল শুরু করেছে। বিওপি ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। বাকি আনুষ্ঠানিকতা। এতে করে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্তে নানা অপরাধ দমনে অনেকটা সহায়ক হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: সেন্টমার্টিন সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ বিজিবি মোতায়েন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন