হিংস্র হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা, স্থানীয়রাই এখন সংখ্যালঘু!

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজার, ২৮ অক্টোবর- নিজ দেশ মিয়ানমারে সেনা ও রাখাইন যুবকদের পাশবিকতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। বিশ্ব মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার বিভীষিকা দেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেন।

এভাবে নতুন করে ৬ থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় পেয়েছে। ফলে নতুন-পুরোনো মিলে এখন ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি সংখ্যালঘু করে দিয়েছে দু’উপজেলার স্থানীয়দের।

এরপরও সব রোহিঙ্গার খাদ্য-বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা জোরদারে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিদিন অব্যাহত রয়েছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে ত্রাণ বিতরণ। অনেক পরিবারে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পাওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে পানির দরে বিক্রির খবরও আসছে।

মানবিকতার কারণে এভাবে সহানুভূতি পেলেও আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের হিংস্র রূপগুলো দিন দিন মেলে ধরছে। খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও।

শনিবার রামুতে এক যুবককে খুন, উখিয়ায় ৪ বাংলাদেশিকে প্রহার ও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ডাকাতি কালে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা আটকসহ গত এক মাসে অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে মানবিক আশ্রয়ের আওতায় থাকা রোহিঙ্গারা। তাদের অপকর্মে স্থানীয়রা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের জন্য রোহিঙ্গারা অবাধে বাংলাদেশি নানা টেলিকম কোম্পানির সিম ব্যাবহার করতে পারায় অনায়াসে অপরাধ করতে পারছে বলে দাবি সচেতন মহলের।

উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী জানান, মাত্রাতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের ভারে উখিয়া-টেকনাফ নুয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাদের অপরাধ কর্মে বিষিয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জীবন। অদূর ভবিষ্যতে রোঙ্গিহারা চরম বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় কাজ করতে গিয়ে দম ফেলার জোঁ পাচ্ছে না পুলিশ। সেখানে পুলিশকেই হামলার শিকার বানাচ্ছে তারা।

তথ্যমতে শুক্রবার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের রামুর খুনিয়াপালং হেডম্যান পাড়ায় আবদুল জব্বার (২৫) নামে স্থানীয় এক যুবককে গলাকেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা যুবক হাফেজ জিয়াবুল মোস্তফা। পুলিশ এ ঘটনায় মোস্তফা ও তার ফুফু ভেলুয়ারা বেগমকে আটক করেছে। নিহত জব্বার রামুর খুনিয়াপালংয়ের কালুয়ারখালীর হেডম্যান বশির আহম্মদের ছেলে।

খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, শুক্রবার রাতে ২নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ায় সামাজিক বনায়নের বাগান পাহারা দিতে যান আবদুল জব্বার। সেখানে রোহিঙ্গা হাফেজ জিয়াবুল মোস্তফা গলাকেটে ও কুপিয়ে তাকে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

রামু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম লিয়াকত আলী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক জিয়াবুল মোস্তফা ও তার ফুফু ভেলোয়া বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পরকীয়ার কারণে জব্বার খুন হয়েছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

এদিকে, উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় ৪ বাংলাদেশি গুরুতর আহত ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ১০ রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। রাতে ডাকাতির চেষ্টাকালে রোহিঙ্গাদের হাতেই আটক হয়েছিল ৫ জন। আর ঘটনার পর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আরো ৫ জনকে আটক করে। এসময় গুলিসহ ২টি দেশীয় এলজি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আটকদের মাঝে কুতুপালং ক্যাম্প তেলীপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কাছিমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩২), সুলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল (২৭), নুর মোহাম্মদ মো. ইউনুছ, বালুখালী থেকে নুরুল বশর (৩০) ও ইলিয়াসের (২৮) নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি। আটকদের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

অপরদিকে শনিবার বিকেলে টেকনাফের হৃীলা রঙ্গিখালী একটি বাড়িতে চুরি করতে ঢুকে ৬টি মোবাইল নিয়ে পালানোর সময় রোহিঙ্গা যুবক জাবেদকে পরিবারের লোকজন হাতে নাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। এরই মাঝে চুরি ও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এমনটি হয়ে থাকলে রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফবাসীর ভবিষ্যতে কী অবস্থা হতে পারে এটি সহজে অনুমেয় বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

সূত্র আরো জানায়, গত ১৭ সেপ্টম্বর রোহিঙ্গাদের হামলায় উখিয়ার পালংখালি এলাকার মুরগির খামার ব্যবসায়ি জমির উদ্দিন আহত হয়। গত ১৬ সেপ্টম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের হামলায় রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটে। যেই সংবাদটি বিদেশি গণমাধ্যমেও স্থান পায়।

৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা বস্তি লাগোয়া খাল থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৮ অক্টেবর কুতুপালংয়ে ত্রাণের টোকেন বিতরণ করতে গিয়ে মুক্তি নামের এনজিও কর্মী রোহিঙ্গাদের কবল থেকে বাঁচতে গাছে উঠে পড়ে।

গত ১৯ অক্টোবর মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে ধলাইয়া ও কালাইয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় স্থানীয় আবু সিদ্দিকের। এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা দুই সহোদর ক্ষুদ্ধ হয়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় আবু ছিদ্দিককে প্রথমে টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। ২১ অক্টোবর ভোর ৬টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

সর্বশেষ শনিবার টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে রোহিঙ্গা দিল বাহার ও সৈয়দ আহমদ দম্পতি অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান স্থাপন করার চেষ্টা করে। এসময় ক্যাম্পে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির আহমদ দোকান নির্মাণে বাঁধা দিলে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তার উপর হামলা চালায় তারা। এঘটনায় এসআই কবির আহত হন। এছাড়াও রোহিঙ্গারা প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথায় ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর মতে, রোহিঙ্গাদের কারণে সীমান্তের সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাদের শক্ত হাতে দমন করা না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। তাই রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া চলাচলে কঠোর নজরদারি রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বিসর্জন দিচ্ছে স্থানীয়রা। এরপরও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের শিকার হওয়া বড়ই নির্মম। রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ অত্যন্ত কঠোর নজরদারি রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা। পুরাতনসহ এখন উখিয়া-টেকনাফে ১০ থেকে ১২ লাখ। রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয় লোকজন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আবার তাদের হিংস্রতার শিকারও হচ্ছে স্থানীয়রা।

 

সূত্র: দেশ বিদেশে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

2 Replies to “হিংস্র হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা, স্থানীয়রাই এখন সংখ্যালঘু!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন