৩ পার্বত্য জেলায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের কাউকে মনোনয়ন দেয় নি

পৌরসভা নির্বাচন

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

তিন পার্বত্য জেলার পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় বড় দুই দল আওয়ামীলীগ-বিএনপি‘র ১০জন প্রার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়ছেন ১৫ প্রার্থী। এদের মধ্যে জাতীয়পার্টি (এরশাদ) মনোনীত ৩ জন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি মনোনীত ১ জন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত ১ জন প্রার্থী। এছাড়াও এ পাঁচটি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আরো ১০ জন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রার্থীদের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ধীমান খীসা, রাঙ্গামাটি পৌরসভায় জেএসএস সমর্থিত ডা: গঙ্গা মানিক চাকমাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। এছাড়া বাঙ্গালী সম্প্রদায়ভুক্ত ৬জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে লড়ছেন।

যদিও নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই বিএনপি-আওয়ামীলীগ থেকে একাধিক উপজাতীয় বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রার্থীর নাম উঠে আসে। এসব প্রার্থীর মধ্যে খাগড়াছড়িতে বিএনপি‘র প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য অনিমেষ চাকমা রিঙ্কু ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ক্যজরী মারমা ও সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরীর নাম আলোচিত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে পারেন নি।

বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাহাড়ের তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপি-আওয়ামীলীগ থেকে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আর সারাদেশের পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিভিন্ন দল থেকে ১৯ জন সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সংখ্যার দিকে থেকে শাসকদল আওয়ামীলীগ আটজনকে, বিএনপি ছয়জনকে এবং বাকি দলগুলো পাঁচজনকে মনোনয়ন দিয়েছে পৌরসভা নির্বাচনে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার পাঁচ পৌরসভায় বিএনপি-আওয়ামলীগের সমর্থন নিয়ে একাধিক উপজাতীয় নেতা কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর পদে লড়লেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাউকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়নি। সেক্ষেত্রে পৌরসভা নির্বাচনে তারা অনেকটা উপেক্ষিত হযেছে। পাহাড়ে জনগোষ্ঠির অর্ধেক উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হলেও পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা পিছিয়ে আছেন। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির উপেক্ষিত হওয়া বা পিছিয়ে পড়ার বক্তব্য মানতে নারাজ বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা।

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈশিং পার্বত্যনিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা বৃহৎ নৃগোষ্ঠী বিভাজনে বিশ্বাস করে না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা সকল জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যাকে দিলে সকলের ভাল হবে, সকলে যার জন্য কাজ করবে, যাকে নিয়ে সামনে এগোনো যাবে তাকেই আমরা মনোনয়ন দিয়েছি। অন্য কোনো বিবেচনা করা হয়নি।

পাহাড়ের পাঁচ পৌরসভায় বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কোন প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় উপজাতীয় বিষয়ক সম্পাদক ম্যামাচিং মারমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের দল প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা বিবেচেনা করেছে।

কোন গোষ্ঠি বা সম্প্রদায় বিবেচনায় মনোনয়ন দেয়া হয়নি দাবী করে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি থেকে কেউ নির্বাচনে আগ্রহী না হওয়ার কারণেই মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয়নি। জোর করে কাউকে রাজনীতি করানো যায়না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসার আগ্রহ তৈরী হতে হবে, দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে হবে সর্বোপরি জনসেবার ইচ্ছাটা নিজের মধ্য থেকেই সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনে যেহেতু জয়-পরাজয়ের একটা বিষয় আছে তাই প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। ভবিষ্যতে কেউ আগ্রহী হলে অবশ্যই মনোনয়ন দেয়া হবে বলেও জানান বিএনপি‘র এ কেন্দ্রীয় নেতা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন