৫০০ ডলারে এক নৌকা রোহিঙ্গা বাংলাদেশে!
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ঘুষ নিচ্ছে: ওয়াশিংটন পোস্ট
স্টাফ রিপোর্টার:
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নে কেবল বাধ্যই করছে না, তাদের বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে নৌকাযোগে পালানোর সময় ঘুষও নিচ্ছে।
আরাকান থেকে এক নৌকাভর্তি রোহিঙ্গা বাংলাদেশ উপকূলে পৌঁছতে স্থানীয় দালালরা সামরিক বাহিনীকে ৫ শ’ থেকে ৬ শ’ ডলার ঘুষ দিচ্ছে। মিয়ানমারের নৌবাহিনী রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা যাতে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিরাপদে পৌঁছতে পারে তা-ও নিশ্চিত করছে। তারা এসব নৌকা এসকর্ট করে নিয়ে আসে। ফোর্টিফাই রাইটস নামের একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন গত ৭ই নভেম্বর এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে আলোড়ন চলছে। মার্কিন টিভি এবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপিসহ বহু প্রভাবশালী মিডিয়া দু’দিন ধরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন ও মন্তব্য প্রকাশ করে চলেছে।
ফোর্টিফাই রাইটস রিপোর্ট বলেছে, ২০১২ সাল থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা পাচারের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট একটি ক্রিমিনাল গ্যাং গড়ে উঠেছে। এ গ্যাংয়ের নিরাপত্তা তারাই দিয়ে থাকে।
ফোর্টিফাই রাইটসের নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কেবল সেটুকু করেই ক্ষান্ত থাকছে না, তারা এ প্রক্রিয়া থেকে টাকা বানাচ্ছে। তিনি এ সমস্যাকে একটি আঞ্চলিক সঙ্কট হিসেবে বর্ণনা করেন। ফোর্টিফাই রাইটস এমন একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছে, যা সাক্ষ্য দিচ্ছে মালয়েশিয়াগামী একটি নৌকাভর্তি রোহিঙ্গাকে নিরাপদে আরাকানের উপকূল ছেড়ে যাওয়ার অনমুতি দিতে সামরিক বাহিনী ৭ মিলিয়ন কিয়াত (চাল) বা ৭ হাজার ডলার ঘুষ নিয়েছে। বর্মী পুলিশ দেশত্যাগী রোহিঙ্গা প্রতি ১৫ হাজার কিয়াত বা ১৫ ডলার ঘুষ নিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, এসব তথ্য এই প্রথম উদ্ঘাটিত হলো। এতদিন কেবল নিপীড়নের কথাই জানা ছিল। ওই রিপোর্ট বলেছে, মিয়ানমার সরকার রুটিনমাফিক বলে আসছে রোহিঙ্গারা তাদের জাতিসত্তার কেউ নন। তারা বাংলাদেশের বাঙালি।
গত ১৫ই সেপ্টম্বর ২০১৪ রাখাইন স্টেটের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর ফোর্টিফাই রাইটসকে বলেছে, আমার এক প্রতিবেশীকে গুলি করে হত্যার পরে আমি আমার গ্রামে আরও দুই সপ্তাহ ছিলাম। এক রাতে সামরিক বাহিনী গ্রামে এলে আমরা সপরিবারে জঙ্গলে পালাই। তবে পরিবারের সঙ্গে এক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। আমি আরও ৩৫ গ্রামবাসীর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ বিচে পুরনো একটি মাছ ধরার নৌকা নজরে আসে। এর মালিক কে আমরা জানি না। আমরা কেবল জানি প্রাণ বাঁচাতে আমাদের পালাতে হবে। তাই নৌকা করে বাংলাদেশে রওনা দিলাম। আমি গ্রাম ত্যাগ করতে চাইনি। কিন্তু জানতাম, বাঁচতে হলে আমাকে দেশত্যাগ করতে হবে।’
সূত্র: মানবজমিন