নিহত সবিতা ইস্যুতে এবার মাঠে নামছে বাঙালী সংগঠনগুলো
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
কমলছড়িতে নিহত সবিতা চাকমা ইস্যুতে এবার মাঠে নামছে পার্বত্য বাঙালীরা। আজকালের মধ্যেই তাদের সবিতা ইস্যুতে মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও সবিতা ইস্যুতে আন্দোলনরত পাহাড়ী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করার কথাও বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে বাঙালীদের একটি সূত্র। সূত্র মতে, বাঙালীরাও চায় এ ধরণের জঘন্য অপরাধের আসল রহস্য উন্মোচিত হোক এবং আসল অপরাধীরা শাস্তি পাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন বাঙালীরা মনে করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ীদের উপর যেকোনো ধরণের অপরাধ হলেই তার দায়ভার বাঙালীদের উপর চাপিয়ে একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে উঠে পড়ে। তাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে পাহাড়ী-বাঙালী সম্প্রীতি ধ্বংস করা এবং বাঙালীদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী খেদা আন্দোলন গড়ে তোলা। সবিতা ইস্যুকেই একই গোষ্ঠী অভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে চাইছে। কিন্তু বাঙালী সংগঠনগুলো এবার সে সুযোগ দিতে চাইছেনা। ফলে বাঙালী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি পার্বত্য বাঙালী নাগরিক সমাজও এ ইস্যুতে মাঠে নামতে পারে।
সূত্র মতে, একের পর এক এ ধরণের অপরাধে বাঙালীদের দায়ী করা হলেও আসল অপরাধকারী ধরা না পড়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা তার দায়ভার বাঙালীদের উপর চাপিয়ে রেখেছে। আসল অপরাধীরা ধরা পড়লে বাঙালীরা এ অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারতো। তাই সবিতার ইস্যুর রহস্য উদঘাটন চায় তারা। বাঙালীরা মনে করছে, সবিতা যদি সত্যিই খুন হয়ে থাকে তাহলে অতিদ্রুত আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক।
উল্লেখ্য, নিহত সবিতার লাশের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত রিপোর্টে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সবিতা চাকমার লাশ নিজ বাড়ির পাশের ক্ষেতে পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন পাহাড়ী সংগঠনগুলো থেকে সবিতা চাকমা বাঙালী ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার কর্তৃক গণধর্ষিতা হয়ে মারা গেছে বালে দাবী করে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রতিবাদ মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়- যা এখনো চলমান।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়িতে নিহত সবিতা চাকমাকে(৩২) ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়নি। এমনকি তিনি ধর্ষিতাও ছিলেন না।
সূত্র জানিয়েছে, সবিতা চাকমার লাশের ময়না তদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন সবিতা চাকমার পিরিয়ড চলছিল এবং পিরিয়ডের অতিরিক্ত পোশাকগুলো ঠিকঠাক ছিল । তবে তার গলায় আঘাতে সুস্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু এতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত টিম বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
তবে নিহতের কারণ যাই ই হোক, পাহাড়ী একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী এই ঘটনাকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে যে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সূত্র মতে, বিগত ৫ জানুয়ারীর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পরাজয়ের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষনার পর খাগড়াছড়ির তিন উপজেলায় নিজেদের প্রার্থী ঘোষনা করে তাদের বিজয়ের লক্ষ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ছাড়াও নানা ধরনের কুট কৌশলের আশ্রয় নিতে থাকে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। কোন কৌশলই যখন কাজে আসছেনা ঠিক তখনই নির্বাচনের চার দিন আগে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ঘাটপাড় এলাকায় উপজাতীয় নারী সবিতা চাকমাকে বাঙ্গালী ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার কর্তৃক ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ এনে জেলার একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি চেষ্টা চালানো হয়। বিশেষ করে সবিতা যেখানে নিহত হয়েছে তার বহুদুর পর্যন্ত বাঙালীদের কোনো বসতি না থাকায় অভিযোগটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য করতে না পারলেও প্রতিবাদ সমাবেশ ও প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় কিছুটা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সক্ষম হয় তারা। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়েছে বলে জেলার পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
অতীতের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি এলাকায় সবিতা চাকমাকে বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ তুলে বাঙ্গালী বিরোধী সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার যে অপচেষ্টা করা হয়েছে সে চেষ্টার ফসল ইতিমধ্যে তারা ঘরে তুললেও ধীরে ধীরে আসল সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। একটি সুত্রে জানা গেছে, তারা এ জাতীয় অপপ্রচারের মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজেদের বিজয় নিশ্চিতই নয় বিভিন্ন দেশী-বিদেশী দাতা গোষ্ঠির সহমর্মিতাও আদায়ের চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসাবে সিএইচটি কমিশনকে দিয়ে এই ঘটনায় একটি বিবৃতিও দিয়েছে।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দুরে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় যেখানে বাঙ্গালীদের যাওয়া নিরাপদ নয় সেখানে বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক দেব রতন চাকমার স্ত্রী সবিতা চাকমাকে (৩০) ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের শামিল’ বলেই মনে করছেন জেলা সদরের সচেতন বাসিন্দারা।