parbattanews

অগ্নিগর্ভ মানিকছড়ি : নেপথ্যে বাঙালীদের ভূমি বে-দখল

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, মানিকছড়ির ভিজাবাউন্তি থেকে ফিরে :

মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঙালী লোকালয় হাতিমুড়ার অদূরে ভিজাবাউন্তি নামক এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র মদদে উপজাতিয় সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙালীদের বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে মানিকছড়ি। এসময় পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা বাঙালীদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ ছিঁড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ বাঙালীরা সকাল থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় বাঙালীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সোমবার মধ্য রাতে মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার সীমান্তবর্তী হাতিমুড়ার অদূরে ভিজাবাউন্তি নামক এলাকায় সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা দল-বল নিয়ে হামলা চালিয়ে বাঙালীদের বাড়ি ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া তিন পরিবার এখন অনেকটাই সর্বস্বান্ত।

সরেজমিনে ভিজাবাউিন্তি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে গত ১৯ বছর ধরে সেখানে স্ব-পরিবারে বসবাস করা মো: এমাদুল শরীফ, মো: আবদুর রাজ্জাক, মো: বাবুল মিয়া‘র বাড়ি-ঘর। সেখানে এখন ক্ষত চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই। ঘরের টিন, গোয়ালের গরু, খোয়ারের হাঁস-মোরগ থেকে শুরু করে সবকিছুই নিয়ে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাবার সময় আবাদী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে সন্ত্রাসীরা।

মানিকছড়ির বক্রিপাড়া, হাফছড়ি, উত্তর হাফছড়ি, মনাদং পাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, বাঙালিদর ভূমিতে মন্দির নির্মাণের চেষ্টা এবং হাফছড়িতে মাদরাসা ও এক কৃষকের খামার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর হাতিমুড়ার অদূরে ভিজাবাউন্তি এলাকায় বাঙালীদের বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা দাবী করে স্থানীয়রা বলেন, সবকিছুর মূলেই হচ্ছে বাঙালীদের ভূমি বেদখল করা।

স্থানীয় বাঙালীরা অভিযোগ করে বলেন, যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী বাঙালীদের ভূমি বে-দখল করতেই ইউপিডিএফ এসব করছে। এসব তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। মানিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: মোস্তাফিজুর রহমান সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ উঠিয়ে নেয়া নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প পুন:স্থাপনের দাবী জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বাঙালীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র সফল হবেনা।

সাবেক মেম্বার মো: আবুল কালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠির অধীনে বসবাস করি যে, তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। তাদের তাণ্ডবলীলার কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দবী করে বলেন, আমরা পাহাড়ী-বাঙালীরা মিলেমিশে বসবাস করতে চাই।

এদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: তোফায়েল আহমেদ পিএসসি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী, সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল রাব্বি আহসান পিএসসি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলম, মো: আবদুল জব্বার ও রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ফরহাদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী ভূমি কমিশন কাজ না করা পর্যন্ত উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলের উচিত ভূমি কমিশনকে সহযোগিতা করা। তিনি ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য্যধারনেরও আহবান জানান।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী বলেন, ভূমির মালিকানাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। বাঙালীরা এখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। দুস্কৃতকারীরা সে বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের এ কর্তাব্যক্তি।

এখনকার ভূমির মালিকানার কাগজপত্র অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জমির পরিমাপ না হওয়ার কারণে চৌহুদ্দি চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এ বিরোধের সৃষ্টি। এজন্য সরকার সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে ভূমি কমিশন গঠন করেছে। ভূমি কমিশন তাদের কাজ শেষ করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সে পর্যন্ত সকলকেই শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি।

এদিকে ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত তিন বাঙালী পরিবারের মাঝে তাৎক্ষণিকভাবে সিন্দুকছড়ি জোনের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।

Exit mobile version