অগ্রগতি নেই আলীকদমে স্থলবন্দর স্থাপন প্রক্রিয়া
বান্দরবানের থানচি ও আলীকদম উপজেলায় স্থলবন্দর স্থাপনে ২০১৫ সালে উদ্যোগ নিয়েছিলো নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এ দুটি উপজেলায় স্থলবন্দর নির্মাণের বিষয়ে সে সময় মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চেয়ে সার-সংক্ষেপ পাঠায় নৌ-মন্ত্রণালয়।
এ সার-সংক্ষেপে স্থলবন্দর স্থাপনের অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর প্রকাশিত হয় পত্র-পত্রিকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থলবন্দর স্থাপন সম্পর্কিত আরেকটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে আলীকদম ও থানচি স্থলবন্দরের তথ্য উপাত্ত নিয়ে পরবর্তী সমাবেশে জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান।
এ সময় তিনি আরও জানান, প্রতিবেশী ভারতের পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত রাজ্যগুলো এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যকে গতিশীল করতে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সীমান্তে পাঁচটি স্থলবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
জানা গেছে, সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলীকদমে স্থলবন্দর স্থাপন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত থাকলেও তার অগ্রগতি নেই।
সোমবার (২৭ জুন) বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আলীকদম উপজেলার স্থানীয় জনসাধারণের পক্ষে ‘আলীকদম স্থলবন্দর স্থাপনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির বাস্তবায়ন’ সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে।
এ আবেদনপত্রে বলা হয়, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানির প্রসার ও জাতীয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলীকদমে স্থলবন্দর স্থাপন জরুরি। আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের বড়বেতী কিংবা দরি পাড়া এলাকায় স্থলবন্দরটি চালু করা হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের প্রসার হবে। ৫০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক ব্যবহার করে স্থলবন্দরটি ব্যবহার করা যাবে। বড় বেতী থেকে মিয়ানমার সীমান্তের দূরত্ব ৪/৫ কিলোমিটার। আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কপথ ব্যবহার করে স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে কম সময়ে মিয়ানমারের সাথে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, আলীকদমে স্থলবন্দর স্থাপনের বিষয়ে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম তথ্য প্রকাশ করেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে বান্দরবান জেলার আলীকদম সীমান্তে বন্দর স্থাপন করা হবে। এটির কার্যক্রম শুরু হলে দু’টি দেশের মধ্যে বৈধ পথে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। সরকারের রাজস্ব আয় দ্বিগুণ হবে।’
এ বিষয়ে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন থাকা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তীও সাংবাদিকদের একই তথ্য দেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সড়ক পথে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে প্রবেশপথ (সাইট) নির্ধারণের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’
জানা গেছে, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশ একমাত্র স্থলবন্দর রয়েছে টেকনাফে। এ স্থলবন্দরের মালামাল আমদানি-রপ্তানি হয় নাফ নদী দিয়ে নৌপথে। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় লাগে বেশি।
আলীকদমবাসীর পক্ষে করা আবেদনপত্রে দাবি করা হয়, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ ও দ্রুত করতে দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দরটি আলীকদম-মিয়ানমার সীমান্তের কুরুকপাতা ইউনিয়নে নির্মাণ করা হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ হবে। আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে মিয়ানমারের কালাদান প্রকল্পের দালেতেমে কিংবা পালেতা সড়ক পথ দিয়ে আলীকদম- পোয়ামুহুরী সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই স্থলবন্দরের কার্যক্রম সহজ হবে। এ সড়কের শেষ সীমানা বড় বেতী কিংবা দরি পাড়া থেকে মিয়ানমান সীমান্ত একেবারে কাছে।
আবেদনপত্রটি সুপারিশ করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দিয়েছেন আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, আলীকদম উপজেলাটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি পাহাড়ি জনপদ। আলীকদমে স্থলবন্দর স্থাপনের বিষয়ে বিগত ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন। যা পরবর্তীতে আমি জেনেছি।
তিনি বলেন, ‘আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়ন মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এবং উন্নত সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক ব্যবহার করে স্থলবন্দরটি বড়বেতী এলাকায় চালু করা হলে স্থানীয় অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’