অগ্রাধিকার কোটায় সকল নিয়োগ কেন বেআইনী ঘোষিত হবে না?

fec-image

পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) “৩২৷ (১) পরিষদের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত পরিষদ, সরকারের 1[অনুমোদনক্রমে] বিভিন্ন শ্রেনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদ সৃষ্টি করিতে পারিবে৷
(২) পরিষদ প্রবিধান অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাঁহাদিগকে বদলী ও সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত, অপসারণ বা অন্য কোন প্রকার শাস্ত প্রদান করিতে পারিবে :
2[তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় থাকিবে৷]”

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর গত ৩১ আগস্ট ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগমের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে,
“বর্ণিত অবস্থায়, রাঙ্গামাটি/বান্দরবান/খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারণের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে বিনীত অনুরোধ করা হলো।”

জেলা পরিষদ আইনের উল্লেখিত ধারা এবং পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির ভাষার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম কিন্তু মৌলিক পার্থক্য আছে। জেলা পরিষদ আইনে বলা হয়েছে, ‘‘পরিষদের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত পরিষদ, সরকারের [অনুমোদনক্রমে] বিভিন্ন শ্রেনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদ সৃষ্টি করিতে পারিবে এবং সেইসব পদের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে লোক নিয়োগ করতে পারবে। আর সেই নিয়োগে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় থাকিবে।”

অর্থাৎ আইনে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া জেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগসমূহ কিন্তু এক নয়। সে কারণেই পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “জেলা পরিষদ ও পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে”।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জেলা পরিষদ আইনের দোহাই দিয়ে এতদিন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহে অগ্রাধিকার কোটায় যত নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর আইনী ভিত্তি কী হবে?

এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন আইনবিদ এবং প্রশাসনের অভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করেছি। তারাও কোনো সদত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টিকে তারা আকারে-ইঙ্গিতে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তার সুজা-সাপ্টা ব্যাখ্যা হলো, এটা হয়েছে বেআইনীভাবে।

এতদিন অগ্রাধিকার কোটার নামে যত বেআইনী নিয়োগ হয়েছে, সে ব্যাপারে পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সঠিক ব্যাখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরার দাবি জানাই। একই সঙ্গে এই বেআইনী প্রথা দ্রুত বন্ধ করার দাবি করছি।

তাছাড়া, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে গত ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই কোটার বিষয়ে সর্বশেষ জারি করা প্রজ্ঞাপনের বাইরে আর কোনো কোটা বলবত দেশে থাকতে পারে না। তাই অগ্রাধিকারের নামে পাহাড়ে জিঁইয়ে রাখা জাতিগত এই বৈষম্য দূর হোক, মেধার জয় হোক সর্বত্র, শান্তি আসুক পাহাড়ে।

লেখক : সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় গবেষক।

ইমেইল : [email protected]

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন