অবশেষে দেশে ফিরলেন শ্রীলংকায় উদ্ধারকৃত ৬১ বাংলাদেশী
আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
অবশেষে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসলেন শ্রীলংকায় উদ্ধার হওয়া ৬১ বাংলাদেশী। স্বজনদের দোয়া, নিজেদের আর্তনাদ আর সংশ্লিষ্টদের প্রাণান্তর চেষ্টায় তারা রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন। ঢাকা বিমান বন্দরে পৌছার প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদেরকে রেড ক্রিসেন্ট’র নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
৬১ জনের মধ্যে ৫৪ জনই টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। অবশিষ্ট ৭জন কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। তন্মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। সোমবার সকাল নাগাদ তারা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন থেকে চোরাইপথে আদম পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট গত ১১ জানুয়ারী রাতে সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবনিয়া ঘাট দিয়ে ১৩৫ জন যাত্রীকে ট্রলারে উঠিয়ে দিয়েছিল।
রওয়ানা দেয়ার ১ সপ্তাহ পর তারা মিয়ানমারের ইয়াংগুন উপকূলে পৌঁছলে মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদেরকে আটক করে বেদম মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর তারা আবার ২০ জানুয়ারী ধরা পড়েছিল থাইল্যান্ড নেভীর হাতে। মিয়ানমার নেভীর দেয়া মারের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার ২য় দফা থাই নেভীর মার খেয়ে যাত্রীদের সকলেই অত্যন্ত কাহিল হয়ে পড়ে। থাই নেভী নাকি তাদের আটকপূর্বক সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর না করে গভীর সমুদ্রে নিয়ে ছেড়ে দেয়। ট্রলারে জ্বালানী তেল না থাকায় এবং সাথে নেয়া খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় ফুরিয়ে যাওয়া সর্বোপরি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় যাত্রীরা অসহায় ভাবে সাগরে ভাসতে ভাসতে উজানে চলে যায়।
শ্রীলংকা দ্বীপের কাছাকাছি ভাসমান অবস্থায় শ্রীলংকান ধনাঢ্য এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার এদের আবিস্কার করে নৌবাহিনীকে খবর দিলে ৩ ফেব্রুয়ারী তারা উদ্ধার হন।
১৩৯ জন আদমের মধ্যে উদ্ধারের দিনই ১জন মারা গিয়েছিল। উদ্ধার হওয়ার পর শ্রীলংকান নেভী এবং সংশ্লি¬ষ্ট ষ্টেশনের পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছিল টেকনাফের আত্মীয় স্বজন। চিকিৎসা করার পর কিছুটা সুস্থ হলে ৬১ বাংলাদেশী এবং ৭৭ জন মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিককে পৃথক করে ফেলা হয়।
তাদেরকে প্রথমে উলুবিল ক্যাম্পে এরপর মাহিয়ানা পুলিশ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে না পৌঁছা এবং এ সংক্রান্ত কোন খবরা খবর না পাওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছিল।
সর্বশেষ ২০ জানুয়ারী থাই নেভীর হাতে ধরা পড়ার দিন দলটির সাথে টেকনাফের আত্মীয়-স্বজনরা স্বল্প সময়ের জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিল।
এদিকে শ্রীলংকায় উদ্ধারপ্রাপ্তদের সরকারী উদ্যোগে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে টেকনাফের আত্মীয়-স্বজনরা সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ ৪ মাস ১০দিন পর তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।