অবৈধ টমটমেই অচল মহেশখালীর সড়ক

fec-image

একজন মানুষের কেবল সময় অপচয় নয়, আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণও বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বীপ উপজেলা ডিজিটাল আইল্যান্ড খ্যাত মহেশখালীর অবৈধ টমটম গুলো। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে শুধুমাত্র লোক দেখানো অভিযানেই মনযোগী দায়িত্বপ্রাপ্তরা। একদিকে ফুটপাত অবৈধ দখল, অপরদিকে মহেশখালীর জনসমাগম বাজারগোলির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত অবৈধ টমটমের দীর্ঘ লাইন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং সবকিছু মিলিয়ে যে অনেকটা অসহায় মহেশখালীবাসী।

কোনমতেই অবৈধ টমটম থেকে রেহাই পাচ্ছে না মহেশখালীর সাধারণ জণগণ। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের বেশ কিছু কারণ থাকলেও মহেশখালীতে এখন প্রধান সমস্যা অবৈধ টমটম ও মিশুক গাড়ির ছড়াছড়ি। বিগত কয়েক বছর থেকে মহেশখালীতে হু হু করে বাড়ছে টমটম ও মিশুক গাড়ি। যা মহেশখালীর ধারণ ক্ষমতা থেকে অনেক গুণ ছড়িয়ে গেছে। যার কারণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে যানজট ও দুর্ঘটনা।

মহেশখালীর আট ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় এ টমটম ও মিশুকের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের মতো। এসব টমটম ও মিশুক গাড়ির নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স। আর চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ। এই অবৈধভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

সম্প্রতি মহেশখালীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, টমটম কিংবা মিশুক গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট কোনো পার্কিং এর স্থান নেই, যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানেই পার্কিং করা হচ্ছে। যার ফলে যানজট তো হচ্ছেই, সাথে সড়ক দুর্ঘটনা। গোরকঘাটা জনতা বাজার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে মহেশখালীর বিভিন্ন উপসড়কগুলোও টমটমের দখলে। ফুটপাতসহ যত্রতত্র টমটম ও মিশুক গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে লোকজনের হাঁটাই বড় দায়। সেই সাথে নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র যানজট।

অধিকাংশ টমটম চালকদের লাইসেন্স নেই, তারা অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ-সব অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের বেপরোয়ায় মহেশখালীতে দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

সর্বোপরি মহেশখালী উপজেলার বর্তমান চিত্র অবৈধ টমটম ও মিশুক গাড়ি বেড়েছে গণহারে। একদিকে যেমন অবৈধ টমটম চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর মাত্রা বেড়েছে, অপরদিকে অদক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১৮ বছরের নিচে ড্রাইভারদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে গণহারে ৷

যার ফলে অবৈধ টমটম ও মিশুক গাড়ির ছড়াছড়িতে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি ঘটছে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা।

প্রতিদিন মহেশখালীর বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে শত শত সাধারণ মানুষ, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়ে চিরকালের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে, অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

গত ১৭ নভেম্বর উপজেলার কালারমারছড়া সিরাতুল মোস্তাকিম মাদ্রাসার ছাত্র সাজ্জাদ নামের ৭বছরের এক শিশু টমটম দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৷

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর রাতে বড় মহেশখালীর শুকরিয়া পাড়া মোটরসাইকেল-মিশুকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মোঃ সাগর (১৮) নামে এক যুবক ৷ সর্বশেষ গত ৬  ডিসেম্বর রবিবার কালারমার ছড়ায় কে জি স্কুলের এক ছাত্রী টমটমের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন।

মহেশখালীর ধারণ ক্ষমতা মতো প্রয়োজনীয় টমটম ও মিশুক প্রাপ্তবয়স্ক, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকদের দ্বারা চলাচলের দাবি সচেতন মহলের। সেই সাথে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান মহেশখালীর সচেতন মহল।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- টমটম ও মিশুক গাড়ির অদক্ষ, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বিরুদ্ধে কয়কটি অভিযান পরিচালনা করেছি, সেইসাথে কিছুদিন আগে মাইকিং করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যাতে ১৮ বছরের নিচে চালকদের মালিক পক্ষ গাড়ি ভাড়া না দেয়। আমরা উপজেলা প্রশাসন জনপ্রতিনিধি, মালিক সমিতিদের নিয়ে আলোচনা করে ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি না দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন