অরক্ষিত সীমানা সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে

fec-image

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৪২৭ কিলোমিটার স্থল-সীমান্তের মধ্যে ২০০ কিলোমিটার এখনও অরক্ষিত। এমনটা জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। এই বিপুল পরিমাণ সীমানায় নেই কাঁটাতারের বেড়া। নেই পর্যাপ্ত বিওপি। এর পুরোটাই পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়। এখানে কাজ করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বিজিবি সদস্যদের। সীমান্ত নিরাপদ করতে আরও বিওপির প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজিবি কর্মকর্তারা।

সূত্র বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের পরেও সীমান্ত এলাকাগুলোতে কমছে না এ সংক্রান্ত অপরাধ। সীমান্তে বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। অনেক সময় দাবি করা হয়, সীমান্ত এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হলেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে।

বিজিবি পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের জনবল যে সেখানে নেই তা নয়। ওইসব এলাকার যে গ্রাউন্ড প্যাটার্ন, তাতে করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মিত হয়নি। দুই দেশের কোনও দেশেই নির্মাণ করা যায়নি। আমাদের যা বিওপি রয়েছে, ওইসব এলাকার জন্য তা অপ্রতুল। ভারত ও মিয়ানমার দুই সীমান্তেই এই ২০০ কিলোমিটার পড়েছে। এসব এলাকায় কাজ করতে গিয়ে বিজিবি সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। ধাপে ধাপে বিওপির কাজ সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত সমতল নয়। এখানে অসমতল, পাহাড়ি এলাকা ও নদী রয়েছে। সীমান্ত লাইন আঁকাবাঁকা হয়ে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে গেছে। এ সব বিবেচনা করে সীমান্তকে অরক্ষিত বলা যায় না। তবে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে এ ব্যাপারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে মাদক ও পণ্য পাচার হচ্ছে। স্মাগলিং, মাদক, মানবপাচার এসব পর্যালোচনা করেই সীমান্ত ‍সুরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। যে কারণে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পরও মাদক ঢুকছে।’

বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী দুটি বিওপি থাকলে ভালো হতো, সেখানে আমাদের আছে একটি করে। তবে আগে অনেক দুর্গম এলাকায় যাওয়া সম্ভব হতো না। এখন সড়কের উন্নয়নের পাশাপাশি বিওপিও বেড়েছে। তাই ব্যাপকতা বাড়ছে বিজিবির কাজেরও। কর্মকর্তাদের মতে, বিওপির ঘনত্ব আরও বাড়ালে সীমান্ত রক্ষার কাজ আরও ভালোভাবে করা সম্ভব।

বিজিবির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত নভেম্বরে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও মাদক জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ পিস ইয়াবা, ৩ কেজি আইস, ২২ হাজার বোতল ফেনসিডিল, ৭ কেজি হেরোইনসহ আরও কিছু মাদক। এ ছাড়া আরও জব্দ করা হয় ৩ কেজি স্বর্ণ, ৪২ কেজি রুপা। এসবে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯৯ জনকে আটক করা হয়। অবৈধ পন্থায় সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১২৬ বাংলাদেশি ও ৯ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন