পাহাড়ি ফল মেলা ২০২৫

অর্গানিক ফল চাষে পাহাড়ের নারী উদ্যোক্তাদের পাশে পার্বত্য মন্ত্রণালয়

fec-image

পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে নানা রকম বৈচিত্রময় ফল ও অর্গানিক খাদ্য সামগ্রি নিয়ে এবারের পাহাড়ি ফল মেলায় অংশ নিয়েছে মোট ৩০টি স্টল। এসব স্টল ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই নারী। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাহাড়ের এসব নারী উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় পুঁজির যোগান দিতে গ্রহণ করেছে নানামুখী প্রকল্প।

অন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন- ‌পাহাড়ি নারীরা অর্গানিক ফল চাষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। পাহাড়ি ফল মেলার উদ্বোধনী দিনে তিনি আরো বলেছেন, পাহাড়ের মাটির ঘ্রাণ, নারীর শ্রম, আর প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের এক অপূর্ব সাক্ষাৎ এবারের এই অর্গানিক ফলের মেলা।

মেলায় অংশ নেয়া একটি স্টলে চাকমা সম্প্রদায়ের একজন নারী উদ্যোক্তা পার্বত্যনিউজকে বললেন, আমি হাতে প্রক্রিয়াজাত পণ্য নিয়ে এই মেলায় এসেছি। আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বড় অবদান আছে। এ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয়, ওখান থেকে আমি আর্থিক অনুদান পেয়েছি। যা দিয়ে আমি প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ কিনে আমার পণ্যের উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ের গুণগতমান বাড়িয়েছি। আজ আমার ব্যবসার পরিধিও আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।

মেলায় অংশ নেয়া অন্য স্টলগুলোর নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ের সময় পাল্টেছে। সাহস আর সচেতনতায় পাহাড়ি নারীরা এগিয়ে চলছে সমান তালে। নিজের ক্ষমতায়ন, সাথে পুরো পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে তারা অবদান রাখছে। কেবল কর্মউদ্যোগেই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আত্মনির্ভরতায় পাহাড়ের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা তো আছেই। একই সাথে পাহাড়ে বাংলাদশ সেনাবাহিনীর যে উল্লেখযোগ্য মানবিক উদ্যোগ চলমান রয়েছে তার দ্বারাও তারা উপকৃত হচ্ছেন।

তবে তাদের অভিযোগ পাহাড়ের কিছু সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে। তারা তাদেরকে এখনো ঘরে আটকে রাখতে চাইছে। এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নারীদের অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ভয়ভীতি, নির্যাতন ও দমননীতির মাধ্যমে পাহাড়ি মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাইছে। পাহাড়ে এসব সক্রিয় সশস্ত্র সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে নারীদের উন্নয়নকে বিপদজনক হিসেবে দেখছে। তাদের চোখে শিক্ষিত, আত্মনির্ভর নারী মানে অবাধ্য, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এক শক্তি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অতুল সরকার মেলা প্রাঙ্গণে ২ জুলাই পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমরা পাহাড়ের সকল শ্রেণির উদ্যোক্তা এবং প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা করছি। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরো বেশি প্রণোদনা ও সহায়তা রয়েছে। উদ্যোক্তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা কিংবা প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে কাজগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ করছে। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ের কাজটি করছি।

কেবল পাহাড়ি ফল মেলাই নয়, এ রকম ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড় আর সমতলের মানুষের মধ্যে অনন্য মেলবন্ধন তৈরিতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়- এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পাহাড়ের মেয়েরা এখন আর ঘরে বসে থাকা নীরব অবলম্বন নয়। তারা তথ্য-প্রযুক্তি আর আধুনিক শিক্ষা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের পথ খুঁজে নিতে চায়। তারা চায় রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ের উন্নয়নের দ্বারা জাতীয় উন্নয়নে অংশীদার হতে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন