parbattanews

অর্থাভাবে আলোর মুখ দেখছে না মার্মা ভাষার প্রথম অভিধান

abhidhan

স্টাফ রিপোর্টার :

৩৩ হাজার মৌলিক আর এক লাখেরও বেশি সমার্থক শব্দ নিয়ে মার্মা ভাষার একটি অভিধান রচনা করা হয়েছে। ১২ বছর গবেষণা করে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন বান্দরবানের রেইছা থলিপাড়ার বাসিন্দা সাধারণ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন শৈপুচিং মার্মা নামের এক ব্যক্তি।

দীর্ঘ একযুগ গবেষণা করে বের করেছেন মার্মা ভাষার ৩৩ হাজার শব্দ। কিন্তু অর্থাভাবে তার এই অভিধান মুদ্রণের কাজ অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। অভিধানটি বের করা গেলে মার্মা ভাষা যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি ভাষা সংরক্ষণ ও সাহিত্য রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বান্দরবান শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে রেইছা থলিপাড়ায় সাধারণ একটি ঘরে বসবাস করেন ৫৫ বছর বযসী শৈপুচিং মার্মা। তাকে সবাই কমরেড হিসেবেই চেনে। আর্থিক দৈন্যদশার কারণে স্কুলের গন্ডি পার করতে পারেননি তিনি। ছোটকালে বাল্যশিক্ষায় অক্ষর চিনেছিলেন, শিক্ষা বলতে এতটুকুই। কাঠমিস্ত্রি আর কারুশিল্প নিয়ে কাজ করে সংসার চালালেও সাহিত্যচর্চার প্রতি আগ্রহ ছিল শৈপুচিং মার্মার। এই আগ্রহ থেকে মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করতে নিজ উদ্যোগে মার্মা ভাষার একটি অভিধান তৈরির কাজ হাতে নেন তিনি।

২০০০ সালে কাজ শুরু করে দীর্ঘ একযুগ গবেষণার পর অভিধানের জন্য তিনি বের করলেন মার্মা ভাষার ৩৩ হাজার মৌলিক শব্দ। মৌলিক ও সমার্থক শব্দ মিলিয়ে তার অভিধানে রয়েছে প্রায় দেড় লাখের মতো মার্মা ভাষার শব্দ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্মা জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা। বার্মিজ বর্ণমালার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে মার্মা ভাষার। কিন্তু মার্মা ভাষার কোনো অভিধান না থাকায় ভাষা সংরক্ষণ ও চর্চায় সমস্যা হয়ে আসছিল। এই সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসেন শৈপুচিং মার্মা। রাতদিন গবেষণা করে রচনা করেছেন মার্মা ভাষার প্রথম অভিধান।

তার বাড়িতে যখন কথা হয় তিনি তার ঘর থেকে শ’খানেক খাতা, বই ও পান্ডুলিপি বের করে দেখালেন। সেখানে মার্মা ভাষার বর্ণমালা ও নানা রকমের শব্দ ও শব্দের উচ্চারণ তিনি লিখেনে রেখেছেন।

তিনি জানান, নিজের আগ্রহ থেকেই এটা করেছি। তিনি আরও জানান, মার্মা ভাষার অনেক শব্দ হারিয়ে যেতে বসেছে চর্চার অভাবে। অভিধান না থাকায় নিজস্ব ভাষায় সাহিত্য চর্চা, কবিতা, নাকট লেখা, ভাষা সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করা খুবই কঠিন। বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে, বার্মিজ বর্ণমালা ও ভাষাচর্চা করে মার্মা ভাষার প্রচলিত ৩৩ হাজার মৌলিক শব্দ বের করেন তিনি। যেখানে বার্মিজ ভাষার অভিধানে এ ধরনের শব্দ রয়েছে মাত্র ১৮ হাজার।

শৈপুচিং জানান, বার্মিজ ভাষায় ১২টি স্বরবর্ণ ও ৩৩টি ব্যাঞ্জনবর্ণ রয়েছে। কিন্তু বার্মিজ ভাষায় স্বরবর্ণের ব্যবহার নেই বললেই চলে। বার্মিজ অধিধানে ১৮ হাজার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ তুলনায় তার বের করা অভিধানটি আরো আধুনিক ও ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে মার্মা লেখক ও গবেষক ক্যশৈপ্রু খোকা জানান, শৈপুচিং মার্মার উদ্ভাবিত অভিধানটি খুবই ভালো মানের। একটি ভাষার চর্চা, সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধকরণের জন্য অভিধান খুবই জরুরি। তাই মার্মা ভাষায় সাহিত্যচর্চা, কবিতা ও নাটক রচনা সর্বোপরি ভাষার আধুনিকায়নের জন্য অভিধানটি মুদ্রণ করা প্রয়োজন। মার্মা ভাষা কমিটি শৈপুচিং মার্মার অভিধানটি মুদ্রণের চেষ্টা করছে বলেও তিনি জানান।

মার্মা অভিধানটির লেখক শৈপুচিং মার্মা জানান, অভিধানটির কাজ শেষ হলেও অর্থাভাবে আলোর মুখ দেখছে না। অভিধানটি মুদ্রণে তিনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্য চেয়েছেন। এ জন্য ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

সে সঙ্গে মার্মা ভাষার ১১০০ প্রবাদ প্রবচন, ১০০ ছড়া, ২০০ কবিতা ও মার্মা ভাষায় সামাজিক আইনের বইয়েরও পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন তিনি।

অভিধানটি সম্পর্কে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গবেষক উচনু মার্মা বলেন, “মার্মা সমাজের আরো অভিজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কথা বলে ভুলক্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো সহায়তা চাওয়া হলে তা দেয়া হবে।”

Exit mobile version