parbattanews

অাগে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ, পরে উচ্ছেদ: পেট্রোবাংলাকে ক্ষতিগ্রস্তরা

মহেশখালী প্রতিনিধি:

মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে নতুন করে উচ্ছেদ অাতংকে ভুগছে প্রায় সাড়ে ৪’শ পরিবার। মহেশখালীতে একের পর এক মেগা উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে এতদাঞ্চলের চাল-চিত্র। সেই সাথে উচ্ছেদ অাতংকেও রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষগুলো।

ইউনিয়নের সোনার পাড়ায় রাস্তার দু’পাশে পেট্রোবাংলার অধিগ্রহণকৃত জায়গার উপর রয়েছে কয়েক’শ পরিবার। সোনার পাড়ার পশ্চিমে খতিয়ানভুক্ত প্রায় ১৪১ একর জায়গা দখল করে সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কিন্তু জায়গার মালিকদের ক্ষতিপূরণের নোটিশ দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও কিছুই পাননি বলে জানালেন জমির মালিকরা। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া নিয়ে দু’চিন্তার মধ্যেই রয়েছেন তারা।

ফের উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অাশংকায় ভুগছেন সোনার পাড়ার তিন হাজার নারী পুরুষ। কালারমারছড়া ইউনিয়নের সোনার পাড়া রাস্তার পুর্বে পাশে ১২নং পাহাড়ি মৌজায় ১৯১ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলা পাহাড়ি মৌজায় যে জায়গার উপর তেলের ডিপো নির্মাণ করতে যাচ্ছে বর্তমানে সেখানে ৪ শতাধিক পরিবার রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

প্রায় দুই হাজার পানের বরজ, বিভিন্ন ফলের গাছ এবং সবজী বাগানসহ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। তাই সোনার পাড়া, চিকনী পাড়া ও নয়া পাড়ার লোকজন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের জন্য লিখিত অাবেদন করেছেন।

তাদের অাবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও অাশ্বাস দেন। কিন্তু হঠাৎ করে পেট্রোবাংলার লোকজন নিয়ে স্থানীয় বন-বিভাগের কর্মকর্তারা এসে পাহাড়ের বসত ভিটার ফলের গাছ কাটতে শুরু করে। এতে মালিকরা বাধা দিলে তাদেরকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান স্থানীয় ফরেস্ট বিট কর্মকর্তারা।

ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না দিয়ে কেন তাদের গাছ কাটা হচ্ছে- ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের কাছে এটা জানতে চাইলে অারও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় স্থানীয় ফরেস্ট বিট কর্মকর্তারা। ফরেস্ট বিট কর্মকর্তারা তাদেরকে বলেন, উপরের নির্দেশে অামরা এখানে গাছ কাটতে এসেছি, এতে কেউ বাধা দিলে মামলারও হুমকি দেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ফলে কোন উপায় না দেখে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে সোনার পাড়া রাস্তার উপর দাড়িয়ে প্রায় দুই হাজার নারী পুরুষ বিশাল মানববন্ধনের অায়োজন করে।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে নয়া পাড়া, চিকনী পাড়া ও সোনার পাড়ার ক্ষতিগ্রস্তদের অায়োজনে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অামাদের দাবি একটাই। অাগে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ, পরে উচ্ছেদ। অামাদের দাবি মানা না হলে অামরা কিছুতেই অামাদের জায়গা জমি ছেড়ে উচ্ছেদ হব না।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, বাপ-দাদারাসহ ৭০/৮০ বছর ধরে অামরা অামাদের পাহাড়ি জায়গার উপর বসবাস করে অাসছি। এখানে অামরা বিভিন্ন ফলের গাছ, সবজী ক্ষেত ও পানের বরজ করে কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে অাছি। অামাদের একমাত্র অায়ের উৎসটুকু হারালে অামরা কি খেয়ে বাঁচব। সরকার অামাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের অাশ্বাস দিলেও কেন বিনা ক্ষতিপূরণে পেট্রোবাংলা কাজ শুরু করতে চায়। সাড়ে চার’শ পরিবার কোথায় যাবে, কি হবে এতগুলো পরিবারের লোকজনের ভবিষ্যৎ?

কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন তারা অত্যন্ত অসহায় ও গরিব। পেট্রোবাংলা তাদেরকে উচ্ছেদ করলে অাগে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। এটা অামি অনেক অাগে থেকেই বলে অাসছি এবং তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে অামি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছেও অবহিত করেছি, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন।

জেলা অাওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাষ্টার রুহুল অামিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. অাববাছসহ প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ ওই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

Exit mobile version