আইনি বিষয়ে আমাদের আরও শক্ত হতে হবে : আবুল হায়াত


অভিনেতা আবুল হায়াত বলেছেন, আইনি বিষয়ে আমাদের আরও শক্ত হতে হবে। শনিবার রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের ‘অ্যাক্টর’স ফ্যামিলি ডে ও অভিষেক-২০২৫। অগ্রজ-অনুজ শিল্পী ও তাঁদের পরিবারের উপস্থিতিতে ফ্যামিলি ডে যেন এক মিলনমেলায় রূপ নিয়েছিল। সাবেক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও অগ্রজ শিল্পীরা এতে বক্তব্য দেন।
নিজের বক্তব্যে অভিনেতা আবুল হায়াত শিল্পীদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন। আইনি পরামর্শ থেকে প্রশিক্ষণ—সবকিছুতে সংগঠনকে আরও কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি।
সম্প্রতি শিল্পীদের বিভিন্ন মামলায় নাম আসা নিয়েও কথা বলেন আবুল হায়াত। তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল প্রবলেম ইদানীং খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে আমরা দেখছি। আইনি বিষয়ে আমাদের আরও শক্ত হতে হবে। কথা নেই বার্তা নেই, শিল্পীদের হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়, এক হাজার জনের মধ্যে সে নাকি আসামি, মানুষ খুন করেছে। তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে জেলখানায় ধরে রিমান্ডে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জিনিসগুলো নিয়েও আমাদের লিগ্যাল কমিটির কাজ করতে হবে, অনেক করণীয় আছে। কারণ, পাবলিকের কাছে আমাদের জাবাবদিহি করতে হয়। হঠাৎ করে সেদিন এক সংবাদমাধ্যম থেকে ফোন করে বলে, ‘‘হায়াত সাহেব, আপনি কী ফিল করেন, ওই যে ওমুক শিল্পীকে ধরে নিয়ে গেল?” বলেছি, আমার ফিলিংয়ের কিছু নেই, ওনার যদি অপরাধ থাকে, সেটা তদন্ত হবে, বিচার হবে; কিন্তু অপরাধ যদি না থাকে, তাহলে এভাবে নিয়ে যাওয়া ন্যক্কারজনক, এটা রীতিমতো অন্যায়। কারণ, যদিও এটা পুরোনো কথা, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। কে কতটা করছেন, এ কারণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে কি না, সংগঠনের ক্ষতি হচ্ছে কি না, এগুলো খতিয়ে দেখার ব্যাপার আমাদের সংগঠনেরও আছে, সরকারেরও দরকার। এই সব ব্যপারগুলো এখন ওপরে আসছে, সংগঠনকে এ বিষয়গুলো দেখতে হবে।’
আবুল হায়াত বলেন, ‘নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে, অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে, নাটকের কল্যাণে কাজ করতে হবে। যাঁরা নতুন শিল্পী, তাঁদেরকে নতুন করে কিছু শিক্ষা ও সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; যাঁরা পুরোনো শিল্পী, তাঁরা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন, যাতে কেউ নিজেকে ছোট মনে না করেন। সবাই যেন মনে করেন, আমরা এক পরিবারের, এক লেভেলের অভিনেতা–অভিনেত্রী। ছোট–বড় অভিনেতা বলতে কিছু থাকবে না। এই অনুভূতি যদি সবার মধ্যে আনতে পারি, তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না এবং সেটা করার জন্য আমাদের ঘন ঘন যোগাযোগ, অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে হবে। সমস্যা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
অভিনয় শিল্পী সংঘ কেন প্রয়োজন ছিল, সে ইতিহাস তুলে ধরে আবুল হায়াত বলেন, ‘আমাদের একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার ছিল। একসময় যখন প্রযোজক থেকে টেলিভিশন—আমাদের পেটে লাথি মেরেছিল, কাজ করিয়ে আমাদের তাঁরা টাকা দিতেন না। ১০০ পর্ব শেষ হওয়ার পরও মেকাপ টাকা পায় না, শিল্পী পায় না, তখন আমাদের সংগঠন করতে হয়েছে।’
তবে সংগঠন করার আরও উদ্দেশ্য ছিল মনে করিয়ে দিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘শুধু সেটাই তো আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না, অভিনয়সংশ্লিষ্ট যত রকমের সমস্যা আছে, উৎকর্ষ সাধনের জন্য যত রকমের ক্রিয়াকর্ম আছে, তা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের জন্ম।’
নতুন অভিনয়শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যাঁরা নতুন আছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলছি, আপনাদের ভেতর জানার আগ্রহ দরকার। যদি মনে করেন, সব জেনে এসেছেন এখানে, তাহলে সেটা ভুল ধারণা। সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন আছে। সিনিয়ররা যখন মেকাপরুমে থাকেন, তখন তাঁদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা উচিত, কোন ধরনের কথাবার্তা বলা উচিত। সারাক্ষণ আড্ডা দিতে পারেন, আড্ডা দেন, তা থেকেও শিখতে পারেন।’
নিজের উদাহরণ দিয়ে আবুল হায়াত জানান, অগ্রজ শিল্পীদের থেকে শিখতে পেরেছিলেন বলেই আজ তিনি এ জায়গায়। তবে নতুনদের মধ্যে এই ইচ্ছার অভাব দেখতে পান। আবুল হায়াত বলেন, ‘আমি এই বয়সে এসে আমার গুরুদের স্মরণ করি, সৈয়দ হাসান ইমাম, গোলাম মোস্তফা, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আলী খান, আবুল খায়ের। এ লোকগুলোকে প্রতিদিন স্মরণ করি, কেন করি? তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, আড্ডা দিয়ে শিখেছি। একটা দৃশ্য করার আগে খায়ের বা মোস্তফা ভাই বা হাসান ইমাম ভাই বলতেন, “এই তুমি এই পাঠ করছ? আমার কাছে আসো, রিহার্সাল দাও’’ এখনের কাউকে বলতে পারব? আমার তো ভয় করে কাউকে বলতে, কী জানি বলে ফেলে। আবার অপমানিত হতে পারি।’