আওয়ামী দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হলেন রামুর মতিউর রহমান
গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন, বিভিন্ন মহলের শোক
আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে কুমিল্লায় আওয়ামী দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্র মাওলানা মতিউর রহমান। তিনি ৬ মে ঢাকা থেকে ফেরার পথে কুমিল্লা রেলস্টেশনে বেধড়ক মারধর ও এলোপাতাড়ি দা’য়ের কোপে আহত হয়ে মারা যান। বুধবার সকালে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে গ্রামের বাড়ি টিলা পাড়া কবরস্থালে দাফন করা হয়েছে। মতিউর রহমানের জানাযায় হেফাজতে ইসলাম নেতা-কর্মী ছাড়াও গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মতিউর রহমান লট উখিয়ারঘোনা এলাকার আমানত উল্লাহর দ্বিতীয় সন্তান। এলাকায় তিনি মাওলানা মতিউর রহমান নামেই পরিচিত। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাঠ শেষ করে চট্টগ্রামের আরেক মাদ্রাসা দারুল ইফতা’য় ক্বেরাত বিভাগে পড়ছিলেন। ওখান থেকেই হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন মতিউর রহমান।
মতিউর রহমানের ভাই আতিকুর রহমান জানান, তারা তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মতিউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়।
তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমান ২৮ মার্চ গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। ১ এপ্রিল তিনি চট্টগ্রামের মাদ্রাসা দারুল ইফতা’য় ফিরে যান। মাঝের এক মাস সময়ে আর বাড়ি আসেনি।’
আতিকুর রহমান বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার আগে মা’কে ফোন করেছিল মতিউর রহমান। মায়ের কাছে ঢাকায় যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। তখন মা বলেছিলেন, “ঢাকায় তো গন্ডগোল হবে। ওখানে না গেলে কী ভালো নয়!” তখন মতিউর বলেছিলেন, “আমি যদি ঢাকায় গিয়ে শহীদ হই, তখন তো তোমাকে সবাই শহীদের মা বলে ডাকবেন।” এই বলে মায়ের অনুমতি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল আমার ভাই। সে সত্যিকার শহীদ হয়েই বাড়ি ফিরেছে।’
তিনি মনে করেন, ‘মতিউর রহমানের শহীদ হবার ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করেছেন।’
হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজার জেলা শাখার য্গ্মু সম্পাদক মাওলানা ইয়াসিন হাবিব জানান, মতিউর রহমান ৫ মে কালো রাতের অভিযান থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু শহীদের মর্যাদা তার কপালে লিখে রেখেছেন মহান আল্লাহ। ঢাকা থেকে ফেরার পথে কুমিল্লায় এসে শহীদ হয়েছেন মতিউর।
তিনি জানান, ঢাকা থেকে মাওলানা মতিউর রহমানসহ ৫ মাদ্রাসা ছাত্র গাড়িতে ব্রাক্ষণবাড়িয়া পর্যন্ত এসেছিলেন। তারা ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে আবার আসেন কুমিল্লায়। কুমিল্লায় এসে চট্টগ্রাম আসার জন্য তারা ট্রেনের টিকিটও করেছিলেন। কিন্তু ট্রেনে উঠার সময়ই আওয়ামী সমর্থকরা তাকে টেনেহিচড়ে নামিয়ে নেয়। ট্রেন থেকে নামিয়েই তাকে কুপিয়ে ও বেধড়ক পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা থেকে লাশ নিয়ে রামু আসা কয়েকজন এসব তথ্য জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ৫ জনের মধ্যে মতিউর রহমানকে রাস্তায় নামিয়ে আনতে পারলেও অন্য একজন ট্রেনে উঠে যেতে সক্ষম হন। অন্য ৩ জন অন্যত্র পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন।’
রামুর প্রবীণ আলেম মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ লাশের জানাযা পড়ান। জানাযার আগে বক্তব্য রাখেন ইসলামি ঐক্যজোটের জেলা সভাপতি মাওলানা হাফেজ ছালামত উল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের জেলা য্গ্মু সম্পাদক মাওলানা ইয়াসিন হাবিব, রাজারকুল মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা মুহসিন শরীফ, ইসলামী ছাত্র সমাজের জেলা সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, সাবেক ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ হোসাইন, বর্তমান ইউপি মেম্বার আবদুর রহমান, হাজী নূরুল ইসলাম ও শহীদ মতিউর রহমানের বড় ভাই আতিকুর রহমান।
হেফাজতে ইসলামের শোক
মাওলানা মতিউর রহমান নিহত হওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জেলা সভাপতি মাওলানা আবুল হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি এনামুল হক, সহ-সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ মুসলিম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ আবদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ইয়াসিন হাবিব, শহর শাখা সভাপতি মাওলানা হাফেজ মুবিনুল হক, সাধারণ সম্পাদক সায়েম হোসাইন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম, অর্থ সম্পাদক মাওলানা আতাউল করিম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নুরুল হক চকোরী।
ইসলামী ঐক্যজোটের শোক
ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টির জেলা সভাপতি মাওলানা হাফেজ ছালামত উল্লাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আ হ ম নুরুল কবির হিলালী, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবদুচ্ছালাম কুদছী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফরিদুল হক।
ইসলামী ছাত্র সমাজের শোক
ইসলামী ছাত্র সমাজের জেলা সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, সহ-সভাপতি আলী আকবর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ মক্কী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ সাইফুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ প্রমূখ।
তারা সরকার ও সরকারি দলের এই নৃশংস হত্যাকান্ডের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।