parbattanews

আগুনে লোকসান কই?

হহহ

ওমর ফারুক শামীম:

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে রাজধানীর রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের বিভ্রান্তিকর ধারণা বা কোন কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব নতুন ঘটনা নয়। পাহাড়ে কোন ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটলেই এসব একচোখা বুদ্ধিজীবি ঢাকায় বসে মুখস্ত বিবৃতি দিয়ে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার কাজটি একধাপ এগিয়ে দেন। কারন প্রশাসন কিংবা দেশের অনেক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এসব বিশেষ মানুষগুলোর কথা সহজে অবিশ্বাস করেনা। তাই প্রকৃত ঘটনা আড়াল হতেও দেরি হয়না। এদের কারণে তদন্ত পর্যন্ত প্রভাবিত হয়।

আমি পাহাড়ের ছেলে। ১৯৮৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পূর্ববতি পরিস্থিতি এবং ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির পরবর্তি পরিস্থিতি দেখে এসেছি। পেশায় সাংবাদিক হবার কারনে অনেক প্রিয় বা অপ্রিয় সত্য প্রকাশের চেষ্টা করেছি। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে যেসব সংবাদ তখনো এড়িয়ে গেছি এখনো এড়িয়ে যাচ্ছি।

পাহাড়ে গত চারদশকের রক্তের হোলি খেলায় কারা লাভবান হয়েছে ঢাকার সেই বিশেষ বুদ্ধিজীবিরা ভালোই জানেন। কিন্তু সেই অপ্রিয় সত্যটি তারা প্রকাশ করতে পারেননা বা তাদের সেই ইচ্ছা নেই। কারন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তৎকালীন জিয়া সরকার রাজনৈতিক ভুল করেছেন। তার খেসারত দিয়েছে পরবর্তী সরকারগুলো। আর বলির পাঁঠা হয়েছে সেখানে বসবাসকারি নিরীহ পাহাড়ি বাঙ্গালিরা।

শান্তিচুক্তির পরও লাশের রাজনীতি বন্ধ হয়নি প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে। ভাগ করো শাসন করো-শোষণ করো বৃটিশদের এই পলিসি এখনো পাহাড়ে চর্চা করা হচ্ছে। যারা অপরাধের মূলহোতা তারা সরকারের সাথেও থাকছে আবার প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টিতেও থাকছে। পাহাড়ের বিভিন্ন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি মোটাদাগের বরাদ্ধেই এদের স্বজন পরিজনের আভিজাত্যের অট্টালিকা বেড়ে উঠছে। ঢাকা কিংবা ক্যানাডা অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা বা ফ্রান্সের চাকমা নগরিতেও তাদের আভিজাত্যের মুকুট দিনদিন বড় হচ্ছে।

লংগদুর আগুনেও তাদের আভিজাত্যের ভাগ্যের আরেকধাপ উন্নতি ঘটবে। পোড়াবাড়ির ছবি দেখিয়ে এসব নেতাদের পুত্র ভগ্নি বা ভাতিজা ভাগিনারাই ফ্রান্স, ক্যনাডা, অস্ট্রেলিয়া, বা আমেরিকান দুতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় বা শিক্ষার জন্যে স্কলারশিপ চেয়ে আবেদন করবে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদগুলি স্বাক্ষি হয়ে তাদের এই আবেদন মঞ্জুরিতে সহায়তা দেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের যারা ঘটনার শিকার হয়েছে তারা কেউ এসব সুবিধার কথা জানতেও পারবেনা। জানলেও বলতে গেলে গর্দান যাবে।

পাহাড়ের প্রতিটি ঘটনায় শান্তি বিনষ্টকারিরা এভাবেই লাভবান হচ্ছে। পাহাড়ি বাঙ্গালি যুগযুগ ধরে একসাথে বসবাস করেও তাদের সম্প্রিতির বন্ধন ধরে রাখতে পারছেনা। সশস্র চাঁদাবাজি বন্ধ করা হচ্ছেনা। নামিদামী উপহার সামগ্রিতে বুদ্ধিজীবি বিবৃতি বিক্রি করে। একইতালে স্থানীয় প্রশাসনও সখ্যতায় গা ভাসিয়ে বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ নেমন্তন্ন গ্রহণ করে।

তবে আমার বিশ্বাস পাহাড়ের নিষ্ঠুর এই চিত্র আর বেশিদিন টিকবেনা। প্রযুক্তির কারনে এখন সত্য সহসাই বেরিয়ে আসছে। নির্যাতিতরা তাদের আর্তনাদ প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে। রাজধানীর বিবৃতি বিক্রেতারাও আর বেশিদিন বিক্রি করতে পারবেনা। সময় ফুরিয়ে গেছে, কারন যাদের নামে মিথ্যে বিবৃতি বিক্রি হতো তারাই এখন সত্যিকারের আন্দোলনের মাধ্যমে জুম্মল্যান্ড চায়। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করে নয়।

রাজধানীর বিশেষ বুদ্ধিজীবি আর ছিচকে বুদ্ধিজীবিদের উদ্দেশ্যে বলছি পাহাড়ের প্রকৃত ঘটনা জানতে বা অনুমান করতে সেখানে গিয়ে অস্রের বাজারে অন্তত ছমাস বসবাস করুন অথবা কোন ব্যবসা বাণিজ্য করতে সেখানে যান তারপর অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবৃতির ব্যবসা করুণ।

তদন্ত ছাড়া কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে দায়ি না করে সত্য প্রকাশের সুযোগ দিন। নির্যাতিতদের সত্যপ্রকাশে সাহস দিন, ওদের নিয়ে ব্যবসা না করে সাহায্যের হাত বাড়ান। লংগদুর আগুনে তাঁদের স্বপ্ন ছাই হয়েছে যাঁরা ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে সেই ফসল বিক্রি করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নামে চাঁদা দিয়েছে। আর এই আগুনের সোনালি রঙে চাঁদাবাজদের আভিজাত্যের স্বপ্ন আরো একধাপ উজ্বল হলো দেশি বরাদ্ধ আর বিদেশি সুবিধার সম্ভাবনায়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

Exit mobile version