আজ পবিত্র আশুরা

fec-image

আজ পবিত্র আশুরা। সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দিন। মুমিনদের কাছে সবচেয়ে শোকের দিন।

ইসলামে অন্যান্য ঘটনার জন্য এই দিনটি আগে থেকেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এদিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)কে কারবালার প্রান্তরে করুণভাবে হত্যা করা হয়। তাই এদিনে শোকে-অনুরাগে দিনভর বিশেষভাবে দোয়া-মোনাজাতসহ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর গিলাবে (প্রতীকী) সম্মান প্রদর্শন করেন ভক্ত-অনুরাগীরা।

এছাড়া বিশেষ ফজিলতের আশায় অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা পালন করেছেন। আজ রোববার (৬ জুলাই) সকাল ১০টায় প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে আশুরার তাজিয়া মিছিল বের করা হবে।

হোসেনী দালান থেকে মিছিলটি লালবাগ আজিমপুর হয়ে ঝিগাতলায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশুরা উপলক্ষে হোসেনী দালান চত্বরে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।

ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনালগ্নেই আগমন ঘটে এক মহিমান্বিত মাসের আর সেটি হলো মহররম। আর মহররম মাসের দশম দিন ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। এটি ইসলামের ইতিহাসে একদিকে যেমন বরকত, রহমত ও বিজয়ের নিদর্শন, অন্যদিকে তেমনি এক হৃদয়বিদারক আত্মত্যাগের স্মারক।

আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ ১০। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট দিনের নাম নয়—এটি ইতিহাস, শিক্ষা, আদর্শ ও আত্মিক বিপ্লবের এক অনন্য প্রতীক।

আল্লাহ তাআলা এ দিনটিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। আশুরার দিনই আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। এই দিনেই তিনি নুহ (আ.)-এর জাহাজকে মহাপ্লাবনের পর নিরাপদে ‘জুদি’ পর্বতে স্থির করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এই দিন আগুন থেকে মুক্তি লাভ করেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে উদ্ধার পান, আইয়ুব (আ.) রোগমুক্ত হন, সুলাইমান (আ.) রাজত্ব ফিরে পান এবং হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ও আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। এই দিনই ইয়াকুব (আ.) তাঁর বহুদিনের হারানো সন্তান ইউসুফ (আ.)-কে ফিরে পান। আশুরা তাই নবী-রাসুলদের বিজয়, মুক্তি ও করুণার দিন হিসেবেও বিবেচিত।

আশুরা কেবল অতীত নবী-রাসুলদের ঘটনার স্মরণ নয়; এই দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এক অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ—কারবালার প্রান্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত।

কারবালার আত্মত্যাগ শুধু কাঁদার জন্য নয়, এটি শিক্ষা নেয়ার জন্য। হোসাইন (রা.) তাঁর ভাষণে বলেন, ‘যে শাসক আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সুন্নাহবিরোধী কাজ করে, জুলুম চালায়—তার বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ায় না, তাদের প্রতিও আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’

কারবালার শিক্ষা হলো জুলুমের কাছে মাথা নত না করা, সত্যের জন্য দৃঢ় থাকা, অন্যায়ের প্রতিবাদে ভয় না পাওয়া। আশুরা আমাদের শেখায় অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পথে প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছপা না হওয়া।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্যনিউজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন