‘আদিবাসীরা কখনোই দাবি করেনি যে তারা এই ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দা’


বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্র নাথ মাহাতো বলেছেন, ‘‘প্রকৃতপক্ষে এই ভূ-খণ্ডের আদি বাসিন্দা যদি বলি, অবশ্যই সেটা বাঙালিরাই।’’ বিবিসি।
গজেন্দ্র নাথ মাহাতো বলেন, ‘‘আদিবাসীরা কখনোই দাবি করেনি যে তারা এই ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দা।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘আদিবাসীদের’ নির্দিষ্ট কিছু সংস্কৃতি-ভাষা আছে, তারা সহজ-সরল মনের, প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সংযোগ আছে, শিক্ষা-দীক্ষায় তারা ততটা অগ্রসর না, ‘আদিবাসী’দের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় যে এরা ‘আদিবাসী’।’’
গজেন্দ্র নাথ মাহাতো বলেন, ‘‘এই ভূখণ্ডে কে আগে এসেছে এবং কে পরে এসেছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে না; তারা এই ‘আদিবাসী’ পরিচয় চায় তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ইত্যাদি বিবেচনায়।’’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমল থেকেই এ দেশে সাগরাম মাঝি ‘আদিবাসী ছাত্রাবাস’, ‘আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়’, ‘আদিবাসী কলেজ’ আছে। ‘তাহলে আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ‘আদিবাসী’ দাবি করব কেন? দাবির তো প্রশ্ন নাই। আমি ‘আদিবাসী’, আমি এই পরিচয়েই থাকতে চাই।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সকল ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর অধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হয়, যা ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিক্ল্যারেশন অন্য দ্য রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপলস’ নামে গৃহীত হয়।
‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর অধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘের ওই ঘোষণাপত্রে পক্ষে ১৪৪টি দেশ ভোট দিয়েছিলো। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিলো বিপক্ষে ভোট। আর ১১টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থেকেছিলো, বাংলাদেশ হলো সেই দেশগুলোর মাঝে অন্যতম। এখন, ২০০৭ সালে গৃহীত হওয়া সেই ঘোষণাপত্রে ‘আদিবাসীদের’ নানাবিধ অধিকারের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে ‘আদিবাসীদের’ কোনও সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ‘আদিবাসী’ সংজ্ঞায়ন কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।
যেমন-ঔপনিবেশিক আমল থেকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে আছে কি না। অর্থাৎ, ওই অঞ্চলের ভূমির সাথে তাদের গভীর সংযোগ থাকতে হবে।
সেইসাথে, যাদের নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কাউকে নিপীড়ন করে ওই ভূখণ্ড দখল করার ইতিহাস যাদের নেই ও যারা ওই এলাকার আধিপত্যবাদী গ্রুপ না।