আমরা পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে দেশের মূল স্রোতধারার সাথে এক করতে চাই : পার্বত্য উপদেষ্টা


পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীকে দেশের মূল স্রোতধারার সাথে এক করতে চাই। তিনি বলেন, পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বড় সমস্যা হলো তাদের কী দরকার তা তারা জানে না বা নিজেদের প্রয়োজনটুকু আদায় করতে জানে না। এসডিজি’র পরিপূর্ণ ফল লাভ করতে হলে পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে নিজস্ব সত্ত্বা বজায় রেখে মূল স্রোতধারার সাথে কাজ করতে হবে। তাদের প্রায়োরিটি নিজেদের ঠিক করতে হবে এবং উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট গোল ঠিক করতে হবে এবং যথাযথ ফোরামে সেগুলো উত্থাপনের কৌশল অর্জন করতে হবে।
আজ রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে Workshop on “SDG Localization Acceleration in CHT শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে মাতৃভাষার সমস্যা রয়ে গেছে। বান্দরবানের আলীকদমে ৬-৭ জন লোক আছে, যারা কেবল তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের এই ভাষাও হারিয়ে যাবে। পার্বত্য জনগোষ্ঠীর হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা সংরক্ষণে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। উপদেষ্টা চাকমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জায়গায় শিক্ষা ও জীবন-জীবিকা তথা লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট এক না।
তাই পার্বত্য এলাকায় কোয়ালিটি এডুকেশন, রেসিডেনসিয়াল এডুকেশন সিস্টেম চালু করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা পার্বত্য এলাকার সর্বস্তরে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতসহ উপজেলা পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এবং জেলা পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা তথা সকল জায়গায় কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চাই।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, আমাদের কোয়ালিটি এডুকেশনের পাশাপাশি প্রয়োজন লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট। এখানকার লাইভলিহুড ইম্প্রুভ করা এবং ভারসাম্য পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা রাঙ্গামাটির সম্ভাবনাময় কাপ্তাই লেক প্রসঙ্গে বলেন, কাপ্তাই লেককে ডেভেলপ করতে হবে। কাপ্তাই লেকের মাছ অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও কাপ্তাই লেককে কাজে লাগাতে পারলে অল্প সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দেয়া যাবে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, বর্তমান সরকার আমাদেরকে সকল সুযোগ সুবিধা দিতে প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার চিন্তা ও সাধনার সুন্দর এই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই এ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের পাশাপাশি ১১টি দেশীয় জাতি গোষ্ঠীর ১৬ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসডিজি ত্বরান্বিত করার জন্য ১৬৯টি ইন্ডিকেটরের মধ্যে ৩৯টি ইন্ডিকেটরকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সমতল এলাকার সাথে পার্বত্য অঞ্চলে এ সমস্ত ইন্ডিকেটর সব জায়গায় সমান নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের শ্রেণী, গোষ্ঠী, সংস্কৃতি, খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিবেশ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও পাহাড়ি মানুষের কনসেপ্ট বিবেচনা করে একটি গোল সেট করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউএনডিপির মাধ্যমে একটি ফিজাবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। আজকের এই ওয়ার্কশপের উদ্দেশ্য হলো স্টাডির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এসডিজি গোলগুলো বাস্তবায়ন করা।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তীব্র পানি সংকট, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য, পরিবেশগত দুর্বলতা, দুর্গম এলাকায় বিদ্যালয়ের অভাব, লোকাল নলেজকে কাজে লাগানো, বাজার ও বাজেট মনিটরিং এবং তথ্যের অভাবসহ একাধিক চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে। উন্মুক্ত আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এই স্টাডি মূল্যায়ন করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক-এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং, এক্সিলারেশান ইন সিএইচটি উপস্থাপক ড. আবু ইউসুফ, ইউএনডিপি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সোনালী দয়ারত্নে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসডিজি লোকালাইজেশন এক্সপার্ট মো. মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।