আম চাষে বছরে ৩০ লাখ আয় করেন খাগড়াছড়ির মংশিতু

fec-image

সরকারি চাকরি ছেড়ে পাহাড়ি গ্রামে ফিরে এসে আম চাষে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করছেন খাগড়াছড়ির তরুণ উদ্যোক্তা মংশিতু চৌধুরী (৩৪)। তিনি ১৬ বছর চাকরি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-তে। প্রথমে সিপাহী পদে, পরে মেডিকেল সহকারি পদে পদোন্নতি পেয়ে রংপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন।

কিন্তু হৃদয়ে লুকিয়ে ছিল উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন। পাহাড়ি মাটির ঘ্রাণে তিনি খুঁজে ফিরেছেন এক ভিন্ন মাত্রার আনন্দ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন- যে মাটিতে তিনি বেড়ে উঠেছেন সেই মাটিতে তিনি কিছু একটা করবেন। যে কাজের দ্বারা নিজের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি পরিবার ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব এ রকমই একটি উদ্যোগ নিতে চাইলেন। তাই ২০২২ সালে বিজিবির চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ফিরে আসেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ায়। সেখানে বাবা থুইলা অং চৌধুরীর সঙ্গে শুরু করেন ৩৫ একর জমিতে আম বাগান।

চূয়ান্ন জাতের আমের স্বপ্নপুরী গড়ে তুলেছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। মংশিতুর বাগানে শুধু দেশি নয়, চাষ হচ্ছে বিশ্বজুড়ে খ্যাত ৫৪ জাতের আম।

উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হল- সূর্য্য ডিম, কিং অফ চাকাপাত, মিয়াজাকি, রেড পালমার, অস্টিন, আলফেনসো, কেশর, তোতাপুরি, ব্ল্যাকস্টোন, রেড লেডি, সিনসিন, গ্লেন, হানি ডিউ, কিউসাভয়, ব্রুনাই কিং সহ অসংখ্য নাম।বর্তমানে বাগানে প্রায় ৫ হাজার আম গাছ রয়েছে। এবছর ৩০টির মতো জাতে ফলন এসেছে।

চাকরি ছেড়ে কেনো বেছে নিলেন চাষাবাদ, জানতে চাইলে পার্বত্যনিউজকে তিন বলেন, আমি নিজেই পরিকল্পনা করি, নিজে দাঁড়িয়ে থাকি বাগানে। আমের যত্ন নিই সন্তান স্নেহে। চাকরির থেকেও এই কাজটা বেশি তৃপ্তিদায়ক।

শুধু নিজের স্বপ্ন নয়, এই উদ্যোগে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় মানুষও। সারাবছর ১২-১৫ জন নিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন। আমের মৌসুমে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০-৫০ জনে।

মংশিতু চৌধুরীর আম বাগানে কাজ করেন বেলপতি ত্রিপুরা। তিনি বাগানের নিয়মিত একজন কর্মী। তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, এখানে কাজ করে ভালোই আছি। ঠিকাঠাক মতো পরিবারের ভরণপোষণ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি।

মংশিতুর বাগানে উৎপাদিত আম বাজারে ও অনলাইনে বিক্রি হয়। বিশেষ করে বিদেশি জাতগুলো বিক্রি হয় সূলভ মূল্যে। ‘কিং অফ চাকাপাত’ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে! সব খরচ বাদ দিয়েও বছরে তিনি প্রতি মওসুমে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাভ করেন বলে জানান মংশিতু।

পাহাড়ের আম এখন দেশজুড়ে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে বে জানায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাগড়াছড়ি জেলায় আম চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বাছিরুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ির আম ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বেশি। এবার আমের ফলনও ভালো হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে এখন এক অনন্য অনুপ্রেরণার নাম মংশিতু। থুইলা অং চৌধুরী ও থুইম্রা সং চৌধুরী দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ মংশিতু এখন পাহাড়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের আইকন হয়ে উঠেছেন। তাকে দেখে এলাকার অনেক তরুণ এখন চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে কিছু করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

মংশিতু প্রমাণ করে দিয়েছেন, সাফল্য শুধু শহরে নয়, পাহাড়ের গাছগাছালির মাঝেও গড়ে ওঠে। শুধু দরকার সাহস, নিষ্ঠা আর স্বপ্ন দেখার মানসিকতা। সরকারি চাকরি ছেড়ে স্বপ্নের পথে হাঁটার যে ঝুঁকি তিনি নিয়েছিলেন, আজ তা হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার বাতিঘর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন