parbattanews

আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর হেলিকপ্টার নিয়ে হামলা করেছে বার্মিজ বিমান বাহিনী

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গুলিতে ২৮ জন রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার ২২ রোহিঙ্গা মুসলমানরা দরগির জার গ্রামের উপকণ্ঠে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে গুলিতে তারা নিহত হয়। এছাড়া, অন্য এলাকায় আরেকটি পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ছয় রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে। খবর পার্সটুডে ও বিসিসি।

এর আগে হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামে গুলিবর্ষণ করার ঘটনা স্বীকার করে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে বোমা ও গুলিবর্ষণের কিছু ছবি নতুন করে পাওয়া গেছে। তাছাড়া স্যাটেলাইট চিত্র থেকেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাদের বাসস্থানে অগ্নিসংযোগের চিত্র ধরা পড়েছে।  এ হামলায় ৫ শয়ের মতো বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। প্রথমে এই অভিযোগ স্বীকার করতে চায়নি মিয়ানমার সরকার।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণের পর একই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ।

১২ নভেম্বর সকাল ১০ টায় মিয়ানমার আর্মি উত্তর মংডুর বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রামে হামলা চালায়। এসময় তারা রোহিঙ্গাদের হত্যা করে ও তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

দুপুর ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ও রাতেও মিয়ানমার বিমানবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে বোমা ও ভারি মেশিনগানের গোলা ছুড়তে থাকে। এতে বিপুল পরিমাণ রোহ্ঙ্গিা মারা যায়। এসময় মিয়ানমার নৌ বাহিনী নাফ নদীতে তাদের টহল ও তৎপরতা বৃদ্ধি করে।

এদিকে ভয়ে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষরা ঘর ছেড়ে ধান ক্ষেতে আশ্রয় নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের খুজে বের করে গ্রেফতার করতে থাকে। ১২ নভেম্বরের এই হামলায় কমপক্ষে ৫ হাজার লোক তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর এবং ৩ ও ১০ নভেম্বরের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, রাখাইনের মংদাউ জেলার পিয়াং পিত, কিত ইয়ো পিন এবং ওয়া পিক গ্রামে ৪৩০টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।

এইচআরডাব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস আজ (রোববার) বলেছেন, স্যাটেলাইট চিত্রগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, সেখানে ধারণার চেয়েও বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গত মাসে সীমান্ত চৌকিতে দুর্বৃত্তদের হামলার পর থেকেই রাখাইন রাজ্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী।

দেশটির সরকার বলছে, রোহিঙ্গা মুসলমানেরা নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে নি। রাখাইনে সেনাবাহিনীর অবরোধের কারণে মনে করা হচ্ছে, মুসলিম গ্রামগুলোতে যেসব ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে খোদ সেনারা জড়িত রয়েছে।

এদিকে বার্মাটাইমস নামের অনলাইনে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের মোকাবিলায় সেদেশের রাখাইন বুদ্ধিস্টদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে বিবিসির জোনাহ ফিশার বলছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানো সেনাবাহিনীর মধ্যে জনপ্রিয় একটি সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, দেশটিতে রোহিঙ্গাদের অনেকেই পছন্দ করে না এবং বার্মিজদের অনেকেই তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে।

মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে লাখ লাখ মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা নতুন করে ফের মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু করেছে।

রাখাইন প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। গত ৯ অক্টোবর অজ্ঞাত পরিচয় সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে মিয়ানমারের ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর সেখানে নিরীহ মুসলমানদের ওপর ফের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হামলা শুরু হয়েছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ জানিয়েছে, মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলেছে, রাখাইনের মংদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি বাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে নতুন এক সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সরকারী বিবৃতি অনুযায়ী, শনিবার সেনাদলের ওপর একদল লোক আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি এবং বল্লম নিয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে প্রায় ৫০০ মানুষ সেনাদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং সৈন্যদের সাহায্যার্থে দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে রোহিঙ্গা গ্রামে গুলি চালানো হয় ।

Exit mobile version